প্রথম প্রশ্ন
1.1 ভরদ্বাজপুত্র সুকেশা, শিবিপুত্র সত্যকাম, গর্গগোত্রীয় সৌর্যায়ণী অশ্বলপুত্র কৌসল্য, বিদর্ভদেশীয় ভৃগুপুত্র ভার্গব, কত্যতনয় কবন্ধী—এঁরা সকলেই ছিলেন ব্রহ্মে সমর্পিত প্রাণ। ব্রহ্ম ছাড়া অন্য কিছু তাঁরা জানতেন না। ব্রহ্মকে তাঁরা সম্যক্ ভাবে জানতে চেয়েছিলেন। তাঁরা সকলে যজ্ঞের কাঠ হাতে নিয়ে গুরু পিপ্পলাদের নিকট উপস্থিত হলেন। তাঁরা জানতেন গুরু পিপ্পলাদ তাঁদের ব্রহ্ম বিষয়ে জ্ঞান দিতে সক্ষম।
1.2 ঋষি তাঁদের বললেন: ‘আমার সঙ্গে একবছর থাক। শাস্ত্র ও গুরুবাক্যে শ্রদ্ধাবান হয়ে কৃচ্ছ্রসাধন ও সংযম অভ্যাস কর। তারপরে তোমাদের যা প্রশ্ন আছে করো। আমি যথাসাধ্য উত্তর দেবার চেষ্টা করব’।
1.3 একবছর পর কত্যপুত্র কবন্ধী পিপ্পলাদের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন: ‘হে ভগবান, এইসব প্রাণীরা কোথা থেকে আসে?’
1.4 পিপ্পলাদ তাঁকে বললেন—প্রজাপতির সন্তান সৃষ্টি করার ইচ্ছে হল। সেই উদ্দেশ্যে তিনি তপস্যা শুরু করলেন। তিনি বুঝতে পারলেন যদি অন্ন [চন্দ্র বা রয়ি] থাকেন এবং সেই অন্ন গ্রহণ করার একজন ভোক্তা [সূর্য] থাকেন, তবে তাঁরা সম্মিলিতভাবে বহু সন্তান সৃষ্টি করতে পারবেন।
1.5 আদিত্যই (সূর্যই) প্রাণ; চন্দ্রই রয়ি অর্থাৎ অন্ন। স্থূল বা সূক্ষ্ম উভয়ই খাদ্য। খাদ্য (কার্য) ও খাদ্যের ভোক্তার (কারণ) মধ্যে যা পার্থক্য, স্থূল ও সূক্ষ্মের মধ্যে সেই একই পার্থক্য।
1.6 (ভোরবেলা) সূর্য উঠে পূর্বদিগন্তে প্রবেশ করে। তখন পূর্বদিকের সকল প্রকার প্রাণীকে সে আপন কিরণে আলিঙ্গন করে। একইভাবে দক্ষিণ, উত্তর, উপর, নীচ এবং অন্তর্বর্তী দিকসমূহ—সর্বত্র সূর্যকিরণ ছড়িয়ে পড়ে। এইভাবে সকল প্রাণীকে সূর্যই প্রকাশ করে, সঞ্জীবিত করে।
1.7-8 সূর্য উদয় হচ্ছেন—সেই সূর্য যিনি সকল জীবের অন্তরাত্মা; সব রূপই তাঁর রূপ। সূর্য একই সঙ্গে প্রাণ এবং অগ্নি দুই-ই অর্থাৎ একই সঙ্গে তিনি সব কিছু গ্রহণ করেন এবং প্রকাশ করেন। একটি ঋক্-মন্ত্রে একথাই বলা হয়েছে।
সহস্র কিরণ নিয়ে সূর্য উদিত হচ্ছেন। নানারূপে তাঁর প্রকাশ। তিনিই প্রাণিকুলের প্রাণস্বরূপ। পণ্ডিতেরা বলেন, এই সূর্য সর্বত্র ও সকল রূপের মধ্যে রয়েছেন; তিনি সদা উজ্জ্বল, সর্বজ্ঞ, এবং সকলের আশ্রয়। তিনিই আলোর একমাত্র উৎস ও সকলকে তাপ দেন।
1.9 প্রজাপতি স্বয়ং সংবৎসর; তিনিই সৃষ্টিকর্তা। দুই পথে তাঁর আসা-যাওয়া—দক্ষিণ এবং উত্তর। এমন অনেক মানুষ আছেন যাঁরা বৈদিক ক্রিয়াকর্মের অনুষ্ঠান এবং লোকহিতকর কর্মে সবসময় ব্যস্ত। তাঁরা এ ধরনের কর্ম করতে গর্ব বোধ করেন। মৃত্যুর পর এই শ্রেণীর মানুষ চন্দ্রলোকে যান। কিন্তু তা কিছুদিনের জন্য। আবার তাঁদের এই মর্তজগতে ফিরে আসতে হয়। সেইজন্যই সন্তান কামনায় যাঁরা যাগযজ্ঞ করেন তাঁরা দক্ষিণপথে যান। এই পথ পিতৃলোকের পথ, এই পথই রয়ি।
1.10 কিন্তু এমন অনেকে আছেন যাঁরা কৃচ্ছ্রসাধন ও আত্মসংযম অভ্যাস করেন এবং শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। শাস্ত্রে ও গুরুবাক্যে তাঁদের অগাধ বিশ্বাস। এইসকল গুণের অধিকারী হয়ে তাঁরা আত্মার অনুসন্ধান করেন। এই আত্মাই হলেন সূর্য। মৃত্যুর পরে এইসব মানুষ উত্তরমার্গ অনুসরণ করেন এবং কালে আদিত্যপদ লাভ করেন। আদিত্য সকল প্রাণীর আশ্রয়। আদিত্যপদ প্রাপ্ত হলে মানুষ অমর হয়, অভয়পদ লাভ করে। এই হল মানুষের সর্বোত্তম অবস্থা। একবার এই অবস্থা লাভ হলে কেউ আর এই মর্তজগতে ফিরে আসে না। এখানেই যাত্রা শেষ। এই বিষয়ে একটি শ্লোক আছে।
1.11 পণ্ডিতেরা বলেন, আদিত্যের পাঁচটি ঋতু এবং বারটি মাস আছে। তিনি সকলের পিতা, স্বর্গে থাকেন এবং তিনিই বৃষ্টির কারণ। আরেক দল পণ্ডিতের মতে, সেই আদিত্য সর্বজ্ঞ এবং তিনি একটি সপ্তচক্রবিশিষ্ট রথ চালনা করেন। সেই চক্রের প্রতিটি আবার ছয়টি শলাকার সঙ্গে সংযুক্ত। এই আদিত্যেই সমগ্র জগৎ প্রতিষ্ঠিত।
1.12 বৎসরের মতো মাসও প্রজাপতির প্রতীক। কৃষ্ণপক্ষ তাঁর অন্ন (চন্দ্র), শুক্লপক্ষ তাঁর প্রাণ (আদিত্য যিনি সেই অন্ন গ্রহণ করেন)। এই কারণেই ঋষিরা, যাঁরা প্রাণ অনুসন্ধান করছেন তাঁরা শুক্লপক্ষে বৈদিক ক্রিয়াকর্মের অনুষ্ঠান করে থাকেন। অন্যরা সেইসব অনুষ্ঠান কৃষ্ণপক্ষেই করেন।
1.13 দিন এবং রাত্রি প্রজাপতির দুটি অংশ। দিন তাঁর প্রাণ, রাত্রি খাদ্য। যাঁরা দিনের বেলায় (কঠোর পরিশ্রমের সময়) ইন্দ্রিয়সুখকে প্রশ্রয় দেন, তাঁরা নিজের জীবনকে ধ্বংস করেন। কিন্তু যাঁরা রাত্রিবেলায় তা সম্পন্ন করেন তাঁরা আত্মসংযমের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
1.14 অন্নই প্রজাপতি। এই অন্ন থেকে আসে প্রাণের বীজ। এই বীজ থেকে সমস্ত প্রাণীর জন্ম। কবন্ধী পিপ্পলাদকে প্রশ্ন করেছিলেন—এই হল পিপ্পলাদের উত্তর।
1.15 এমন অনেক গৃহস্থ আছেন যাঁদের বিবাহিত জীবন প্রজাপতির জীবনাদর্শে গড়া। তাঁরা প্রজাপতির মতোই নির্দিষ্ট নীতি অনুযায়ী সন্তানের জন্ম দেন। তাঁদের মধ্যে কিছু মানুষ আবার কঠোর ও সংযত জীবন যাপন করে থাকেন। তাঁরা সত্যেও দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত। মৃত্যুর পর এরকম ব্যক্তি চন্দ্রলোক অর্থাৎ পিতৃলোকে যান। তাঁদের পক্ষে এটিই ব্রহ্মলোক।
1.16 যাঁদের মধ্যে মিথ্যাচার, কুটিলতা বা কপটতার লেশমাত্র নেই তাঁরাই শুধু ব্রহ্মলোকে স্থান পাওয়ার যোগ্য।
দ্বিতীয় প্রশ্ন
2.1 অতঃপর বিদর্ভদেশীয় ভার্গব তাঁকে (পিপ্পলাদকে) প্রশ্ন করলেন, ‘ভগবান, কয়টি ইন্দ্রিয় প্রাণীর দেহকে ধারণ করে থাকে? তার মধ্যে কোন্টি দেহকে প্রকাশ করে এবং কোন্টি প্রধানতম?’
2.2 পিপ্পলাদ ভৃগুপুত্রকে বললেন—আকাশই এই দেবতা। তেমনি বায়ু, অগ্নি, জল, পৃথিবী, বাক্, মন, চোখ এবং কানও দেবতা। তাঁরা সকলেই দর্পভরে নিজ নিজ ক্ষমতার কথা বলতে আরম্ভ করলেন। তাঁদের সকলের দাবি তাঁরাই দেহকে বলিষ্ঠ করেছেন এবং দেহকে ধারণও করে আছেন।
2.3 প্রাণ, যিনি প্রধান, ইন্দ্রিয়সমূহকে বললেন : ‘এভাবে অহঙ্কার করো না। আমি নিজেকে পাঁচটি বিভিন্ন শক্তিতে ভাগ করেছি এবং দেহকে সচল রাখতে তাদের নিয়োগ করেছি। দেহের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমি দায়ী।’ ইন্দ্রিয়সমূহ সেকথায় কর্ণপাত করলেন না।
2.4 প্রধান ইন্দ্রিয় প্রাণ অভিমানবশত উঠে যাওয়ার অর্থাৎ শরীর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার ভান করলেন। সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য ইন্দ্রিয়রাও তাঁকে অনুসরণ করলেন। আবার প্রাণ নিজের জায়গায় ফিরে এলে অন্যরাও যে যাঁর জায়গায় ফিরে এলেন। এ যেন রানী মৌমাছির মৌচাক ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার মতো। রানী চাক ছেড়ে বেরিয়ে গেলে গোটা মৌমাছির দল তার সঙ্গে বেরিয়ে পড়ে আবার রানী থাকলে অন্যরাও থাকে। বাক্, মন, চোখ, কান ইত্যাদি ইন্দ্রিয়গুলি মৌমাছির দলের মতো। প্রাণের উপর প্রসন্ন হয়ে তাঁরা প্রাণের স্তব করতে লাগলেন।
2.5 এই প্রাণই অগ্নি এবং অগ্নিরূপে ইনি তাপ দেন। সূর্য, মেঘ, ইন্দ্র, বায়ু, পৃথিবী এবং চন্দ্র [যাঁদের তিনি প্রকাশও করেন] সবই এই প্রাণ। সংক্ষেপে বলতে গেলে [কার্যরূপে] তিনিই স্থূল এবং [কারণরূপে] তিনিই সূক্ষ্ম। আবার তিনি অমরও বটে। এই সবই প্রাণ।
2.6 অন্যান্য বস্তু তো বটেই এমনকি ঋক্, যজুঃ এবং সাম বেদ, বৈদিক যাগযজ্ঞ, ক্ষত্রিয়, ব্রাহ্মণ সকলেই প্রাণকে আশ্রয় করে আছেন। রথচক্রে শলাকাগুলি যেমন চক্রের কেন্দ্রকে আশ্রয় করে থাকে, এও ঠিক তেমনি।
2.7 তুমি প্রজাপতিরূপে মাতৃগর্ভে নড়েচড়ে বেড়াও। তুমি তোমার মা-বাবার মতো চেহারা নিয়ে জন্মগ্রহণ কর। হে প্রাণ, তুমি সব শরীরে ইন্দ্রিয়দের প্রধান হয়ে রয়েছ। মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীরা ইন্দ্রিয়ের দ্বারা (ভোগ্যবস্তু গ্রহণ করে) তোমাকে উপহার দেয় (তাদের পক্ষে এটাই সঠিক কাজ)।
2.8 হে প্রাণ, দেবতাদের উদ্দেশে যজ্ঞে প্রদত্ত আহুতির তুমি শ্রেষ্ঠ বাহক। শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে পিতৃপুরুষের উদ্দেশে প্রথম নিবেদিত অন্ন তুমিই গ্রহণ কর। ঋষিরা যে সত্য অনুশীলন করেন তাও তুমি। আবার তুমিই ইন্দ্রিয়দের নিজের নিজের কাজে সঠিকভাবে চালনা কর।
2.9 হে প্রাণ, তুমিই ইন্দ্র, দেবগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দেবতা। তুমি রুদ্ররূপে সকলের সংহার কর। আবার তুমিই সকলের রক্ষক। সূর্যরূপে তুমি আকাশে বিচরণ কর এবং তুমি সমস্ত জ্যোতিষ্কমণ্ডলীর প্রভু।
2.10 হে প্রাণ, যখন মেঘরূপে তুমি বর্ষণ কর তখন সমস্ত প্রাণীরা (যারা তোমার সন্তান) উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। কারণ তারা তখন মনে করে, ‘এখন থেকে আমরা নিজেদের জন্য যত খাদ্য চাই তত পাব।’
2.11 হে প্রাণ, তুমি ব্রাত্য, অশুদ্ধ (কারণ তোমার উপনয়ন হয়নি)। তথাপি তুমিই সেই একর্ষি নামক অগ্নি এবং (যজ্ঞে প্রদত্ত) হবির ভোক্তা। তুমি জগতের পরমপতি। তুমিই প্রথম জন্মগ্রহণ করেছ। আমরা ইন্দ্রিয়রা তোমার প্রয়োজনীয় খাদ্য তোমাকে দিই। হে মাতরিশ্বা, তুমি আমাদের পিতা (অথবা তুমি মাতরিশ্বা অর্থাৎ বায়ুর পিতা)।
2.12 আমাদের কথা বলা, শোনা, দেখা, চিন্তা করা এবং মনের অন্যান্য কর্মে তোমার যেসব অংশ উপস্থিত—সেগুলিকে একযোগে তুমি কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত কর। দয়া করে তুমি আমাদের ছেড়ে যেও না।
2.13 জগতে যা কিছু আছে সব প্রাণই নিয়ন্ত্রণ করেন। মা যেমন সন্তানকে রক্ষা করেন, প্রাণও তেমনি আমাদের রক্ষা করুন—এই প্রার্থনা। তিনি আমাদের সৌভাগ্য ও জ্ঞান দান করুন।
তৃতীয় প্রশ্ন
3.1 অতঃপর অশ্বলপুত্র কৌসল্য ঋষি পিপ্পলাদকে জিজ্ঞাসা করলেন : হে ভগবান, প্রাণ কোথা থেকে আসেন? শরীরে তিনি কিভাবে প্রবেশ করেন? কিভাবে তিনি নিজেকে সারা দেহে ছড়িয়ে দেন এবং কিভাবেই বা নিজের কর্ম সম্পাদন করেন? কি কৌশলে তিনি শরীর ছেড়ে বেরিয়ে যান? কিভাবে তিনি বাইরের বস্তু অর্থাৎ প্রাণী ও পদার্থসমূহকে ধারণ করেন? ইন্দ্রিয় ইত্যাদি শরীরের সঙ্গে যুক্ত বিষয়গুলিই বা কিভাবে তাঁকে আশ্রয় করে থাকে?
3.2 ঋষি পিপ্পলাদ কৌসল্যকে বললেন, ‘অত্যন্ত কঠিন বিষয়ে তুমি প্রশ্ন করছ। কিন্তু যেহেতু তুমি ব্রহ্মনিষ্ঠ, আমি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দেব।’
3.3 প্রাণ আত্মা থেকে আসেন। দেহকে আশ্রয় করে যেমন ছায়া থাকে তেমনি আত্মায় প্রাণ নিহিত রয়েছেন। ইচ্ছা হলে এই প্রাণ স্থূল শরীর ধারণ করেন।
3.4 সম্রাট যেমন তাঁর অধীনস্থ কর্মচারীদের নিয়োগ করে বলেন—‘অমুক অমুক গ্রামে যাও এবং তাদের দেখাশোনা কর’—ঠিক সেইভাবে প্রাণ তাঁর অধীনস্থ ইন্দ্রিয়সমূহকে যথানির্দিষ্ট কর্মে নিযুক্ত করেন।
3.5 এই প্রাণ গুহ্য ও জননেন্দ্রিয়ের তত্ত্বাবধান করতে অপানকে নিযুক্ত করেন। চোখ, কান, মুখ ও নাসারন্ধ্রে প্রাণ নিজে অবস্থান করেন। শরীরের কেন্দ্রীয় অংশের তত্ত্বাবধান করে সমান। সমান খাদ্যকে পরিপাক করে সার পদার্থে পরিণত করে (যেমন রক্তে)। প্রাণের অগ্নি (যা পাকস্থলীর মধ্যে) থেকে সাতটি শিখা নির্গত হয় (যা হল সাতটি ইন্দ্রিয় : যথা দুটি চোখ, দুটি কান, দুটি নাসারন্ধ্র এবং জিভ)।
3.6 হৃদয়ই আত্মার আসন। এই হৃদয়ে একশ একটি ধমনী রয়েছে। প্রতিটি ধমনীর একশ শাখা এবং প্রতিটি শাখার বাহাত্তর হাজার উপশাখা। ব্যান এই ধমনী ও তার শাখাপ্রশাখার মধ্য দিয়ে চলাচল করে।
3.7 যদি কোন মানুষ পুণ্যকর্ম করে থাকে তবে মৃত্যুকালে উদান তাকে সুষুম্না নাড়ীর মধ্য দিয়ে পুণ্যলোকে নিয়ে যায়। আবার যদি মানুষ পাপকর্ম করে তাহলে উদান তাকে পাপলোকে নিয়ে যায়। কিন্তু যদি কেউ পাপ-পুণ্য উভয়বিধ কর্ম সমপরিমাণে করে থাকে তবে উদানের সাহায্যে সে মনুষ্যলোকে যায়।
3.8 সূর্যই বাইরের প্রাণ। চোখকে অনুগ্রহ করতেই যেন সূর্যের উদয় হয়, যাতে চোখ সব কিছু দেখতে পায়। এই প্রাণই পৃথিবীর অধিপতি দেবতা এবং তিনি তাঁর অধীনস্থ অপানকে দৃঢ়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন। সেই কারণেই কোন বস্তু উপরেও উঠে যায় না আবার মাটিতেও পড়ে না; অপান সব কিছুকে নিজের নিজের জায়গায় ধরে রাখে। দ্যুলোক এবং ভূলোকের অন্তর্বর্তী আকাশে বায়ু রয়েছে। সেই বায়ুই সমান এবং তা প্রাণের অধীন। প্রাণের অপর এক অধীনস্থ বায়ু হল ব্যান যা শরীরের ভিতরে বাইরে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে।
3.9 অগ্নিই উদান। মানুষের যখন মৃত্যু হয় তখন তার শরীর শীতল হয়ে যায়। তার সমস্ত ইন্দ্রিয় তখন মনে লীন হয় এবং সে জন্মান্তরের জন্য প্রস্তুত হয়।
3.10 মৃত্যুকালে জীবাত্মা প্রাণে প্রবেশ করে। সঙ্গে থাকে মন এবং সেই সময়কার মনের যত চিন্তা ও বাসনা সমূহ। প্রাণ তখন অগ্নি অর্থাৎ উদানের সঙ্গে যুক্ত হয় (কেননা উদানই তাকে দেহের বাইরে নিয়ে যায়)। আত্মা যে লোক কামনা করে প্রাণ তাকে সেই লোকেই নিয়ে যায়। তারপরে আত্মা নতুন জন্ম গ্রহণ করে।
3.11 যে জ্ঞানী ব্যক্তি প্রাণকে এইভাবে জেনেছেন (অর্থাৎ প্রজাপতি বা হিরণ্যগর্ভরূপে) তিনি কখনও সন্তানকে হারান না (কেননা তিনি জানেন প্রজাপতির সঙ্গে তিনি অভিন্ন) এবং তিনি অমরত্ব প্রাপ্ত হন। এই তত্ত্বকে সমর্থন করে একটি শ্লোক আছে।
3.12 প্রাণ পরমাত্মা থেকে আসে। তারপর বাসনা পূরণের জন্য উপযুক্ত শরীর গ্রহণ করে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে নিজেকে স্থাপন করে। প্রাণের প্রতিটি অংশের জন্য আবার পৃথক পৃথক কাজ ভাগ করা থাকে। বাইরের প্রাণই সূর্য; আবার শরীরের মধ্যে চোখই প্রাণ। প্রাণ ও তার কার্যকলাপ বুঝতে পারলে মানুষ অমর হয় (কারণ তখন সে জানে সে-ই স্বয়ং প্রাণ)।
চতুর্থ প্রশ্ন
4.1 তারপরে গর্গ বংশের সৌর্যায়ণী পিপ্পলাদকে প্রশ্ন করলেন, হে ভগবান, মানুষের শরীরে কোন্ কোন্ ইন্দ্রিয় নিদ্রা যায় এবং বিশ্রাম গ্রহণ করে? কোন্ কোন্ ইন্দ্রিয়ই বা জেগে থাকে এবং কাজ করে? এই দুই প্রকার ইন্দ্রিয়ের মধ্যে (একটি সক্রিয়,অপরটি নিষ্ক্রিয়).কোন্টি বা স্বপ্ন দেখে? সুষুপ্তির আনন্দই বা কে উপভোগ করে? সুষুপ্তির অবস্থায় সকল ইন্দ্রিয় কোথায়ই বা যায়?
4.2 পিপ্পলাদ তখন তাঁকে বললেন: হে গার্গ্য, সূর্যাস্তের সময় সূর্যের রশ্মিসকল সূর্যেই ফিরে যায়। কিন্তু সূর্যোদয়ে সেই রশ্মিগুলি পুনরায় চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সেইরূপ সুষুপ্তি অবস্থায় ইন্দ্রিয়সকল তাদের দেবতা মন, তাতে ফিরে যায় এবং মনের সঙ্গে এক হয়ে যায়। তখন ইন্দ্রিয়সকল কোন কাজ করে না। এর ফলে সুষুপ্তি অবস্থায় মানুষ (স্থূলদেহ) শোনে না, দেখে না, ঘ্রাণ নেয় না, স্বাদ গ্রহণ করে না, স্পর্শ করে না, কথা বলে না, কোন কিছু গ্রহণ করে না, ইন্দ্রিয়সুখ ভোগ করে না, মলমূত্র ত্যাগ করে না, চলাফেরাও করে না। অন্যেরা তখন তার সম্পর্কে বলে থাকে, ‘সে ঘুমিয়ে আছে’।
4.3 এই দেহ একটি নগরের মতো। আমরা যখন ঘুমোই তখন অগ্নির সমান যে প্রাণ তা জেগে থাকে। অপান হল গার্হপত্য অগ্নি। আর ব্যান হল ‘অন্বাহার্যপচনঃ’ অর্থাৎ দক্ষিণাগ্নি। কারণ প্রাণকে গার্হপত্য অগ্নি থেকে নেওয়া হয়েছে।
4.4 সমান হল হোতা বা পুরোহিত। অগ্নিহোত্র যজ্ঞে হোতা যেমন আহুতিকে দুটি সমান ভাগে দান করেন ঠিক সেরকম আমাদের শরীরের সামঞ্জস্য রক্ষার্থে সমানবায়ুও নিঃশ্বাস এবং প্রশ্বাসকে সমপরিমাণে ভাগ করে। মন সেই ব্যক্তি যার জন্য যজ্ঞ করা হয়। উদান অভীষ্ট ফল, কারণ সুষুপ্তি অবস্থায় উদানই মনকে ব্রহ্মের কাছে নিয়ে যায়।
4.5 স্বপ্নবস্থায় আমাদের মন তার নিজের মহৎ শক্তিকে অনুভব করে। জাগ্রত অবস্থায় আমরা যা দেখে থাকি স্বপ্নে তা ধরা পড়ে। ঠিক সেরকম, জাগ্রত অবস্থায় আমরা যা শুনে থাকি স্বপ্নে যেন তাই শুনতে পাই। আমরা হয়তো বহু জায়গায় বা বহু দেশে গিয়ে থাকতে পারি, কিন্তু স্বপ্নে যেন আমরা সেই সব স্থানেই আবার যাই। যা দেখেছি বা দেখিনি, যা শুনেছি বা শুনিনি, যা অনুভব করেছি বা করিনি, সত্য এবং অসত্য—এমন সব বস্তুই আমরা দেখে থাকি। সবকিছুর সঙ্গেই আমরা তখন একাত্মতা অনুভব করি।
4.6 আত্মার মহিমায় মন যখন অভিভূত অর্থাৎ মনের মধ্যে বাসনা প্রবেশের দরজা যখন বন্ধ, সেই সুষুপ্তি অবস্থায় মন কোন স্বপ্ন দেখে না। এই সুষুপ্তি ভাঙ্গার পর আমাদের দেহ ও মন খুব সতেজ হয়।
4.7-8 হে সৌম্য, দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায় যে, পাখীরা যেমন গাছে তাদের বাসার দিকে উড়ে যায়, ঠিক তেমনি এ জগতের সবকিছুই পরমাত্মায় আশ্রয় গ্রহণ করে। অর্থাৎ পরমাত্মায় লীন হয়ে যায়।
পৃথিবী ও তার সূক্ষ্ম রূপ (গন্ধ), জল ও তার সূক্ষ্ম রূপ (স্বাদ বা রস), অগ্নি ও তার সূক্ষ্ম রূপ (রূপ), বায়ু ও তার সূক্ষ্ম রূপ (স্পর্শ), আকাশ ও তার সূক্ষ্ম রূপ (শব্দ), চোখ এবং চোখ যা দেখে, কান এবং কান যা শোনে, নাক এবং নাক যা গন্ধ নেয়, জিভ এবং জিভ যা স্বাদ গ্রহণ করে, ত্বক এবং ত্বক যা স্পর্শ করে, বাগিন্দ্রিয় ও বক্তব্য বিষয়, হাত এবং হাত যা গ্রহণ করে, জননেন্দ্রিয় ও তার ভোগ্য বিষয়, পায়ু এবং মলমূত্রাদি বর্জন, পা এবং তার গন্তব্যস্থল, মন এবং তার মনন, বুদ্ধি এবং বুদ্ধির বিষয়, অহঙ্কার ও তার বিষয়, স্মৃতি এবং তার বিষয়, জ্ঞান এবং জ্ঞানের বিষয়, প্রাণ ও প্রাণ যা ধারণ করে—এই সবকিছুই পরমাত্মাতে বিলীন হয়।
4.9 যিনি দেখেন, স্পর্শ করেন, শোনেন, স্বাদ গ্রহণ করেন, চিন্তা করেন, অনুভব করেন এবং যিনি কর্তা ও ইন্দ্রিয়সমূহের নিয়ামক তিনিই জীবাত্মা বলে পরিচিত। এই জীবাত্মাই অক্ষর পরমাত্মায় প্রতিষ্ঠিত।
4.10 হে সৌম্য, আত্মা নিরঞ্জন, নামরূপহীন, বর্ণহীন,শুদ্ধ এবং নিত্য। যিনি এই আত্মাকে জানেন তিনি আত্মাতে মিলিত হয়ে যান। অর্থাৎ তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ও অমর। এরকম ব্যক্তি সর্বজ্ঞ এবং তিনি সকলের সঙ্গে এবং সবকিছুর সাথে একাত্মতা অনুভব করে থাকেন। এই বিষয়ে একটি শ্লোক আছে।
4.11 হে সৌম্য, সুষুপ্তিতে জীবাত্মা ও তার ইন্দ্রিয়সমূহ, ইন্দ্রিয়ের বিষয়সকল, এবং উপাদানসমূহ অক্ষর পরমাত্মায় বিশ্রাম গ্রহণ করে। জাগ্রত অবস্থায় কোন ব্যক্তি যদি পরমাত্মার সাথে নিজেকে অভিন্ন বলে উপলব্ধি করেন তখন তিনি নিখিল জগতের সাথে একাত্মতা অনুভব করেন এবং সবকিছুর মধ্যে তিনিই বিরাজ করেন।
পঞ্চম প্রশ্ন
5.1 অতঃপর শিবিপুত্র সত্যকাম ঋষি পিপ্পলাদকে প্রশ্ন করলেন: ‘ভগবান, যদি কোন ব্যক্তি সমস্ত জীবন ওম্কে ধ্যান করেন তাহলে তিনি এই ধ্যানের দ্বারা কোন্ লোক প্রাপ্ত হবেন?’ পিপ্পলাদ তাঁকে বললেন :
5.2 হে সত্যকাম, ওম্ নির্গুণ ব্রহ্ম (পরব্রহ্ম) এবং সগুণ ব্রহ্ম (অপরব্রহ্ম) এই দুই-এরই প্রতীক। যিনি একথা জানেন তিনি ওম্কে ব্রহ্মের প্রতীক রূপে ধ্যান করেন। পরিণামে তিনি যে কোন অবস্থা প্রাপ্ত হন।
5.3 যিনি ‘অউম্’-এর যে কোন একটি অক্ষর (যেমন অ)-এর ধ্যান করেন, সেই ধ্যানই তাঁর জাগতিক জ্ঞানলাভের পক্ষে যথেষ্ট। শীঘ্রই তিনি আবার এই পৃথিবীতে ফিরে আসেন। ‘অউম্’-এর ‘অ’ ঋগ্বেদের প্রতীক। ‘অ’-এর ধ্যানের দ্বারা তিনি মনুষ্যজন্ম লাভ করেন। তখন তিনি তপস্যায় মগ্ন হন ও ব্রহ্মচর্য, আত্মসংযম অভ্যাস করেন। শাস্ত্র ও গুরুবাক্যে তখন তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস জন্মায়। এই সকল গুণের জন্য তিনি সকলের শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে ওঠেন।
5.4 সাধক যদি ‘অউম্’-এর দ্বিতীয় অক্ষরের (‘উ’কার) ধ্যান করেন, তবে এর দ্বারা তিনি মনকে উন্নত করেন (অর্থাৎ সাধক এই অক্ষরটির সাথে একাত্মতা অনুভব করেন)। মৃত্যুর পর এই বর্ণই (‘উ’কার) সাধককে অন্তরীক্ষের মধ্য দিয়ে চন্দ্রলোকে নিয়ে যায়। অন্তরীক্ষ হল স্বর্গ এবং মর্তের মধ্যবর্তী আকাশ। ‘অউম্’-এর দ্বিতীয় বর্ণ ‘উ’ যজুর্বেদের প্রতীক। সাধক চন্দ্রলোকের সমস্ত ঐশ্বর্য ভোগ করে পুনরায় মানুষ রূপে এই মর্তলোকে ফিরে আসেন।
5.5 যিনি পরমাত্মার প্রতীকরূপে তিন অক্ষর বিশিষ্ট ‘অউম্’-এর ধ্যান করেন তিনি জ্যোতির্ময় সূর্যে লীন হয়ে যান। সাপ যেমন জীর্ণ খোলস ত্যাগ করে ঠিক তেমনি এরূপ ব্যক্তিও নিজেকে সব পাপ থেকে মুক্ত করেন। সামমন্ত্র তখন তাঁকে ব্রহ্মলোকে নিয়ে যায়, সেখানে তিনি ব্রহ্মের সাথে অভিন্নতা উপলব্ধি করেন। এমনকি সাধক তখন নিজেকে হিরণ্যগর্ভ থেকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করে থাকেন। তখন তিনি জানেন তিনিই এ জগতের সবকিছু হয়েছেন। এ বিষয়ে দুটি শ্লোক আছে।
5.6 যিনি ‘অউম্’-এর তিনটি অক্ষরকে আলাদাভাবে ধ্যান করেন তিনি মৃত্যুর অধীন। কিন্তু এই তিনটি অক্ষরকে একত্রে ধ্যান করতে পারলে সেই ধ্যানই যথার্থ। জাগ্রত, স্বপ্ন ও সুষুপ্তি এই তিন অবস্থার অধিষ্ঠাত্রী দেবতা আলাদা নন, এক। যিনি সঠিকভাবে এই দেবতার ধ্যান করেন তিনিই ‘অউম্’-এর প্রকৃত অর্থ জানতে পারেন। যিনি এই ‘অউম্’কে ঠিক ঠিক ভাবে জানেন তিনি অভয়পদ লাভ করেন।
5.7 সাধক যদি ব্রহ্মরূপে ‘অউম্’কে ধ্যান করেন, তবে তিনি ঋক্-মন্ত্রের সাহায্যে মনুষ্যলোক, যজুঃমন্ত্রের দ্বারা চন্দ্রলোক এবং সামমন্ত্রের সহায়ে ব্রহ্মলোক প্রাপ্ত হন। একমাত্র জ্ঞানী ব্যক্তিরাই এই ব্রহ্মলোক লাভ করেন। ওম্কে ঠিক ঠিক ভাবে জানতে পারলে সাধক পরম শান্তি অনুভব করেন। সাধক তখন জরা, ব্যাধি এবং সকল প্রকার ভয় থেকে মুক্ত। তখন তিনি অমৃতত্ব লাভ করেন এবং পরমাত্মার সাথে এক হয়ে যান।
ষষ্ঠ প্রশ্ন
6.1 তারপর ভরদ্বাজপুত্র সুকেশা পিপ্পলাদকে বললেন: ভগবান, কোসলদেশীয় রাজপুত্র হিরণ্যনাভ একসময়ে আমার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘হে ভরদ্বাজপুত্র, ষোলকলাবিশিষ্ট পুরুষকে আপনি জানেন কি?’ আমি সেই কুমারকে বললাম, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। যদি আমি জানতাম তবে আপনাকে বলব না কেন?’ যে লোক মিথ্যা কথা বলে সে সমূলে বিনষ্ট হয়। অতএব আমি মিথ্যা কথা বলতে পারি না।’ এই কথা শুনে তিনি নীরবে রথে চড়ে চলে গেলেন। এখন আমি আপনাকে সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করছি, ‘সেই পুরুষ কোথায়?’
6.2 পিপ্পলাদ তাঁকে বললেন, হে সৌম্য, দেহের মধ্যে হৃৎপদ্মকাশে পরমাত্মা বিরাজিত। এই ষোলকলা (যেমন প্রাণ) পরমাত্মার কাছ থেকেই এসেছে।
6.3 সেই পুরুষ চিন্তা করলেন : যখন আমি এই শরীর ছেড়ে চলে যাই তখন আসলে কে শরীর ত্যাগ করেন? একইভাবে কার জন্যই বা আমি অনুভব করি যে, আমি এই দেহে আছি?
6.4 সেই পুরুষ (সগুণ ব্রহ্ম) হিরণ্যগর্ভকে (প্রাণাত্মা) সৃষ্টি করলেন। হিরণ্যগর্ভ বা প্রাণ থেকে সৃষ্টি হল শ্রদ্ধা। শ্রদ্ধা থেকে আকাশ, বায়ু, অগ্নি, জল, পৃথিবী এবং ইন্দ্রিয় এল (সৃষ্টি হল)। তারপর তিনি সৃষ্টি করলেন মন এবং অন্ন। অন্ন থেকে ক্রমে বীর্য, বেদসমূহ, কর্ম (যাগযজ্ঞ), স্বর্গ এবং অন্যান্য লোক, এবং লোকসমূহে বিভিন্ন নাম বা পদসমূহ এল (সৃষ্টি হল)।
6.5 দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায় সমুদ্রে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত নদীসমূহ বইতে থাকে। সমুদ্রে মিলিত হবার পর তাদের আর কোন পৃথক অস্তিত্ব থাকে না, অর্থাৎ তাদের নামরূপ লোপ পায়। তখন তারা সমুদ্রই হয়ে যায়। অনুরূপভাবে, কোন ব্যক্তি যখন নিজেকে জানেন তখন তিনি ‘পুরুষ’ হয়ে যান। এর ফলে তাঁর সমস্ত উপাধি লোপ পায়। তখন থেকে তিনি নিজেই পুরুষ যিনি নির্গুণ এবং অমর। এ বিষয়ে একটি শ্লোক আছে।
6.6 রথনাভিতে (রথচক্রের কেন্দ্রবিন্দুতে) রথচক্রের শলাকাগুলি প্রতিষ্ঠিত। একইভাবে জীবাত্মার উপাধিসকলও পুরুষের (পরমাত্মার) ওপর আশ্রিত। সেই পুরুষকে জানতে চেষ্টা কর। তাঁকে জানতে পারলে মৃত্যু আর তোমাকে স্পর্শ করতে পারবে না।
6.7 পিপ্পলাদ শিষ্যদের বললেন : ‘পরব্রহ্মকে আমি এই পর্যন্তই জানি। তাঁর সম্পর্কে জানবার আর কিছু নেই।’
6.8 শিষ্যরা গুরুর প্রতি তাঁদের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করলেন। তাঁরা বললেন : ‘আপনি আমাদের পিতা, কারণ আপনিই আমাদের অজ্ঞানতার পরপারে নিয়ে গেছেন। আমরা সেই মহান ঋষিদের বারবার প্রণাম করি।’
Om. Peace! Peace! Peace!
Related Articles: