Verse 1: পরিবর্তনশীল এই জগতে সবকিছুরই ক্রমাগত পরিবর্তন হচ্ছে। তথাপি সব কিছু পরমেশ্বরের দ্বারা আবৃত। ত্যাগ অনুশীলন কর এবং সর্বভূতের চৈতন্যস্বরূপ আত্মায় দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত হও। অপরের ধনে লোভ করো না।
Verse 2: শাস্ত্রবিহিত কর্ম করার ফলে কোন ব্যক্তি শত বৎসর বাঁচতে ইচ্ছুক হতে পারেন। এভাবে যিনি কাজ করেন তিনি তাঁর কর্মফলে লিপ্ত হন না। এছাড়া আর অন্য কোন পথ নেই।
Verse 3: এমন সব জগৎ আছে যা (সূর্যহীন) দানবদের যোগ্য আবাস। এই সব জগৎ অন্ধকারে আচ্ছন্ন, যেমন কোন অন্ধ ব্যক্তি (অর্থাৎ যাঁরা আত্মজ্ঞান-রহিত) যেভাবে জগৎকে অনুভব করেন ঠিক সেই রকম। আত্মজ্ঞান অর্জনে উদাসীন হওয়া আত্মহত্যার সামিল। এই সব ব্যক্তি মৃত্যুর পর সূর্যহীন লোক অথবা অসুরলোক প্রাপ্ত হন।
Verses 4-5: ব্রহ্ম এক ও অদ্বিতীয়। ব্রহ্ম একাধারে স্থির, আবার অপর দিকে চঞ্চল, মন অপেক্ষাও দ্রুতগামী। তিনি সব সময়ই সবার আগে রয়েছেন। ইন্দ্রিয়সমূহও এঁর নাগাল পায় না। তিনি নিজে স্থির থেকেও অন্য সকলকে অতিক্রম করে যান। শূন্যের দেবতা হিরণ্যগর্ভরূপে তিনি এই স্থূল ও দৃশ্যমান জগতের সবকিছুকে ধরে রেখেছেন।
তিনি (ব্রহ্ম) সচল হয়েও স্থির। তিনি দূরেও আছেন আবার কাছেও আছেন। তিনি (ব্রহ্ম) সব কিছুর ভেতরেও আছেন আবার সব কিছুর বাইরেও আছেন।
Verses 6-7: যিনি নিজের মধ্যে সকলকে দেখেন এবং সকলের মধ্যে নিজেকে দেখেন, তিনি কোন কিছু ঘৃণা করেন না।
যখন কোন ব্যক্তি সব কিছুর মধ্যে এক আত্মাকেই দেখেন এবং জানেন যে তিনি নিজেই সব কিছু হয়েছেন, তখন তিনি কোন কিছুকে ঘৃণাও করেন না বা কোন কিছুর প্রতি আসক্তও হন না।
Verse 8: তিনি (আত্মা) সর্বব্যাপী, জ্যোতির্ময়, নিরবয়ব, অক্ষত, অচ্যুত, নির্মল, সর্বজ্ঞ, নিজ মনের নিয়ন্তা, সর্বোত্তম, স্বয়ম্ভূ এবং চিরন্তন। তিনি প্রত্যেকের জন্য যথাকর্তব্য বিধান করেন।
Verses 9-11: যাঁরা যান্ত্রিকভাবে যজ্ঞাদি কর্ম (অবিদ্যা) করেন তাঁরা অজ্ঞানতার অন্ধকারে প্রবেশ করেন। কিন্তু যাঁরা শুধু দেবদেবীর উপাসনা করেন (বিদ্যা) তাঁরা আরো গভীরতর অন্ধকারে প্রবেশ করেন।
পণ্ডিতেরা বলেন—অবিদ্যার পথ (অগ্নিহোত্র এবং অন্যান্য যজ্ঞকর্ম) এবং বিদ্যার পথ (দেবদেবীর উপাসনা) ভিন্ন ভিন্ন ফল উৎপন্ন করে। জ্ঞানী ব্যক্তিরাও এই কথা সমর্থন করেন।
যিনি দেবদেবীর উপাসনা করেন (বিদ্যা), আবার যাগযজ্ঞাদি কর্মও করেন (অবিদ্যা), তিনি যজ্ঞকর্মের দ্বারা (অবিদ্যা) অমরত্ব লাভ করেন এবং দেবদেবীর উপাসনার (বিদ্যা) দ্বারা আনন্দ লাভ করেন।
Verses 12-14: যাঁরা অব্যক্তকে (জগতের কারণ অবস্থা) উপাসনা করেন তাঁরা অন্ধের মতো অন্ধকারে প্রবেশ করেন। কিন্তু যাঁরা ব্যক্তকে (অর্থাৎ চতুর্দিকের দৃশ্যজগৎ) উপাসনা করেন তাঁরা আরো গভীর অন্ধকারে প্রবেশ করেন।
পণ্ডিতেরা বলেন সম্ভূতির (হিরণ্যগর্ভ) এবং অসম্ভূতির (প্রকৃতি) উপাসনা পৃথক পৃথক ফল দান করে। জ্ঞানীরা তা সমর্থন করেন।
যিনি অব্যক্তকে (অসম্ভূতি) এবং ব্যক্তকে (সম্ভূতি) একই সঙ্গে উপাসনা করেন তিনি অব্যক্তের উপাসনা দ্বারা অমৃতত্ব লাভ করেন এবং ব্যক্তের উপাসনা দ্বারা মৃত্যুকে জয় করেন।
Verses 15-16: সত্যের মুখ উজ্জ্বল সোনার পাত্রের দ্বারা আবৃত। জীবন ও জগতের ধারক হে সূর্য, তুমি সেই আবরণটি দয়া করে সরিয়ে দাও যাতে সত্যজিজ্ঞাসু আমি, সত্যকে দর্শন করতে পারি।
হে পষন্, হে নিঃসঙ্গ পথচারী, হে সর্বনিয়ন্তা, হে প্রজাপতি-নন্দন সূর্য, অনুগ্রহ করে তুমি তোমার কিরণরাশি সংহত কর। তোমার তেজ সংবরণ কর। আমি তোমার কল্যাণতম রূপটি দেখতে চাই। তোমার মধ্যে সেই পুরুষ রয়েছেন; আমিই সেই পুরুষ।
Verses 17-18: এখন সেই মৃত্যু আসন্নপ্রায়। আমার প্রার্থনা যেন আমার প্রাণবায়ু বিশ্বপ্রাণে বিলীন হয়। যেন আমার দেহ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। হে মন, সারা জীবনে তুমি যা কিছু করেছ তা চিন্তা কর। নিজের কৃতকর্ম স্মরণ কর।
হে অগ্নি, যা র্হিতকর তা লাভের জন্য অনুগ্রহ করে আমাদের সুপথে চালিত কর। হে দেব, আমাদের সব কৃতকর্ম এবং চিন্তা তুমি জান। আমাদের মধ্যে যা কিছু অশুভ, অনুগ্রহ করে তা দূর কর। আমরা তোমাকে বারবার প্রণাম করি।
Related Articles: