স বেদৈতৎ পরমং ব্রহ্মধাম
যত্র বিশ্বং নিহিতং ভাতি শুভ্রম্।
উপাসতে পুরুষং যে হ্যকামাস্তে
শুক্ৰমেতদতিবর্তন্তি ধীরাঃ॥১
অন্বয়: সঃ (যিনি আত্মজ্ঞান লাভ করেছেন); এতৎ পরমং ব্রহ্মধাম (এই পরম আশ্রয় ব্রহ্মকে); বেদ (জানেন); যত্র (যাঁতে); বিশ্বম্ (জগৎ); নিহিতম্ (নিহিত আছে); শুভ্রং ভাতি (যিনি শুদ্ধ ও প্রকাশিত); যে অকামাঃ ধীরাঃ হি (যে নিষ্কাম জ্ঞানী ব্যক্তিরা); পুরুষম্ উপাসতে (সেই পুরুষের উপাসনা করেন); তে (তাঁরা); এতৎ (এই); শুক্রম্ (শুক্র সম্ভূত শরীরকে); অতিবর্তন্তি (অতিক্রম করেন)।
সরলার্থ: যে-ব্যক্তি নিজ আত্মাকে জানেন, তিনি ব্রহ্মকেও জানেন—যে-ব্রহ্ম জগৎকে ধারণ করে রেখেছেন। তিনি একথাও জানেন—এই জগৎকে যে দেখা যায় তার কারণ এ জগৎ ব্রহ্মে আশ্রিত। যে-সকল সাধক নিষ্কামভাবে ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষের উপাসনা করেন, তাঁদের আর পুনর্জন্ম হয় না।
ব্যাখ্যা: ‘সঃ বেদ’—যখন কোন ব্যক্তি জানেন। কি জানেন? ‘এতৎ পরমং ব্রহ্মধাম’—এই পরম ব্রহ্মকে জানেন। ব্রহ্মই পরম, সর্বোচ্চ। কোন বিশেষণে তাঁকে বিশেষিত করা যায় না। ‘ব্রহ্মধাম’ বলতে ব্রহ্মের আবাসকে বোঝায়। এ ব্ৰহ্মত্বের অবস্থা অর্থাৎ যে অবস্থায় সাধক ব্রহ্মের সঙ্গে একহয়ে যান। সমগ্র বিশ্ব এই ব্রহ্মধামেই নিহিত আছে। যাঁরা একথা জানেন তাঁরা জন্ম-মৃত্যুর পারে চলে যান। এই শ্লোকে ‘অতিবর্তন্তি’ শব্দটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। পরিণামে আমরা সবাই এই অবস্থাই লাভ করব। ‘অতি’ শব্দটির অর্থ হল অতিক্রম করা আর ‘বর্তন’ অর্থ অস্তিত্ব। ‘শুক্রম্’ বলতে প্রাণবীজকে বোঝানো হয়েছে। তাঁরা প্রাণবীজকে অতিক্রম করেন। প্রাণবীজকে অতিক্রম করার অর্থ মৃত্যুর পারে যাওয়া। মানুষ যখন জন্ম-মৃত্যুর পরে যায় তখনই সে মুক্ত হয়। বর্তমানে আমরা জন্ম-মৃত্যুর চক্রে আবদ্ধ। বারে বারে আমরা এই পৃথিবীতে ফিরে আসি। কিন্তু ব্রহ্মধামে একবার প্রবেশ করতে পারলে, একবার ব্রহ্মের সঙ্গে অভিন্নতা অনুভব করতে পারলে আমরা জন্ম-মৃত্যুর চক্রকে অতিক্রম করে মুক্ত হয়ে যাই।