এষোঽণুরাত্মা চেতসা বেদিতব্যো
যস্মিন্ প্রাণঃ পঞ্চধা সংবিবেশ।
প্রাণৈশ্চিত্তং সর্বমোতং প্রজানাং
যস্মিন্ বিশুদ্ধে বিভবত্যেষ আত্মা॥৯
অন্বয়: এষঃ অণুঃ আত্মা (এই সূক্ষ্ম আত্মা); চেতসা (শুদ্ধ বুদ্ধির দ্বারা); বেদিতব্যঃ (জ্ঞাতব্য); যস্মিন্ (যে শরীরে); প্রাণঃ (প্রাণ বায়ু); পঞ্চধা (পাঁচ প্রকারে); সংবিবেশ (প্রবেশ করেছে); প্রাণৈঃ (প্রাণের দ্বারা); প্রজানাম্ (প্রাণিগণের); সর্বং চিত্তম্ ([প্রাণীদের] সমগ্র হৃদয়); ওতম্ (ব্যাপ্ত); যস্মিন্ বিশুদ্ধে (যে চিত্ত শুদ্ধ হলে); এষঃ আত্মা (উক্ত আত্মা); বিভবতি (নিজের স্বরূপ প্রকাশ করেন)।
সরলার্থ: প্রাণবায়ু পাঁচভাগে ভাগ হয়ে দেহের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। একই দেহে সূক্ষ্ম আত্মাও রয়েছেন যা শুদ্ধ বুদ্ধির গোচর। এ কথা সত্য যে, সকল বস্তু ও ইন্দ্রিয়ের মধ্যেও শুদ্ধ চৈতন্য (আত্মা) বিরাজ করেন। চিত্তশুদ্ধি হলে আত্মা তখন নিজেকে প্রকাশ করেন।
ব্যাখ্যা: আত্মা স্বভাবতই সূক্ষ্ম। শুদ্ধ মনে তিনি নিজেকে ধরা দেন। কিন্তু আত্মার অবস্থান কোথায়? দেহ মধ্যস্থ হৃৎপদ্মে তিনি বিরাজ করেন। আবার একই দেহের ভিতর পঞ্চবায়ুও (প্রাণ, অপান, ব্যান, উদান ও সমান) রয়েছে। সাধক কিভাবে এই আত্মাকে আবিষ্কার করেন? চিত্তশুদ্ধির দ্বারা। চিত্তশুদ্ধি হয় কি ভাবে? ভাল-মন্দ, সত্য-মিথ্যা, নিত্য-অনিত্য এই বিচারের দ্বারা। এর ফলে নিত্য-অনিত্যের মধ্য থেকে সাধক নিত্য. বস্তুকেই গ্রহণ করেন। মাখন দুধের সব অংশ জুড়ে থাকলেও দুধ থেকে তাকে পৃথক করা যায়। সেই রকম ভাবে জ্বালানির সর্বত্র আগুন থাকলেও আগুনকে জ্বালানি থেকে পৃথক করা যায়। শরীরের সর্বত্র আত্মা রয়েছেন। প্রাণ ও ইন্দ্রিয়সকলের সঙ্গেও আত্মা যুক্ত। মুঞ্জা ঘাস থেকে যেমন মাঝের ডগাটিকে (ইষিকা) আলাদা করা যায় তেমনি বিচার বুদ্ধির দ্বারা আত্মাকেও শরীর থেকে পৃথক করা যায়। নিজেকে স্পষ্টভাবে দেখতে হলে যেমন পরিষ্কার আয়না লাগে ঠিক তেমনি শুদ্ধ মনে আত্মা নিজেকে প্রকাশ করেন। চিত্তশুদ্ধি না হলে আত্মজ্ঞান লাভ করা যায় না।