ব্রহ্মৈবেদমমৃতং পুরস্তাদ্ব্রহ্ম
পশ্চাদ্ব্রহ্ম দক্ষিণতশ্চোত্তরেণ।
অধশ্চোর্ধ্বং চ প্রসৃতং
ব্রহ্মৈবেদং বিশ্বমিদং বরিষ্ঠম্॥১১
অন্বয়: ইদম্ অমৃতম্ (এই আনন্দস্বরূপ); ব্রহ্ম এব (ব্রহ্মই); পুরস্তাদ্ ব্ৰহ্ম (সম্মুখে ব্রহ্ম); পশ্চাৎ (পিছনে); দক্ষিণতঃ (দক্ষিণে অর্থাৎ ডাইনে); চ (এবং); উত্তরেণ (উত্তরে); ব্রহ্ম (ব্রহ্ম); অধঃ (নীচে); ঊর্ধ্বং চ (উপরেও); ইদং ব্রহ্ম এব প্রসৃতম্ (এই ব্রহ্মই ব্যাপ্ত আছেন); ইদং বিশ্বং বরিষ্ঠম্ (এই জগৎ ব্রহ্ম [শ্রেষ্ঠ ])।
সরলার্থ: আনন্দস্বরূপ ব্রহ্ম তোমার সম্মুখে; তিনি আবার তোমার পিছনেও বটে। দক্ষিণে, উত্তরে, উপরে, নীচে সর্বত্রই তিনি। তিনি সর্বব্যাপী। এ জগৎ স্বয়ং ব্রহ্ম।
ব্যাখ্যা: ব্রহ্মই একমাত্র সত্য। তিনি স্বয়ং-প্রকাশ। তিনিই একমাত্র অধিষ্ঠান যাঁর উপর সব কিছু আরোপিত উপাধি মাত্র। উপাধিগুলি সত্য নয়। যেমন রজ্জুতে আরোপিত সর্প অথবা মরুভূমিতে আরোপিত মরীচিকা সত্য নয়, এ-ও ঠিক তেমনি।
কিন্তু একথার অর্থ এই নয় যে, এই দৃশ্যমান জগৎ মিথ্যা। এ জগৎ আপেক্ষিক ভাবে সত্য; একটি বিশেষ দেশ ও কালের পরিপ্রেক্ষিতে সত্য। দেশ-কালের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই জগতের লয় হয়।
অন্ধকারে রজ্জুতে সর্পদর্শনে, সাপটিকে যে সত্য বলে মনে হয় তার কারণ সাপটি দড়ির উপরে অর্থাৎ একটি সত্য বস্তুর উপর আরোপিত। দড়ি সরিয়ে নিলে সাপও অদৃশ্য হয়। তেমনি ব্রহ্মকে আশ্রয় করে আছে বলেই জগৎকে সত্য বলে মনে হয়।
ব্রহ্ম ছাড়া আর কিছুই নেই। ব্রহ্ম সর্বত্র রয়েছেন। তিনি সর্বব্যাপী। তিনিই একমাত্র সত্য। সব কিছুকে ব্রহ্মের প্রকাশ রূপে দেখতে হবে। এ-ই যথার্থ জ্ঞান। জগৎকে জগৎ রূপে দেখার নামই অজ্ঞানতা।
মুণ্ডক উপনিষদের দ্বিতীয় মুণ্ডকের দ্বিতীয় অধ্যায় এইখানে সমাপ্ত।