যঃ সর্বজ্ঞঃ সর্ববিদ্ যস্য জ্ঞানময়ং তপঃ।
তস্মাদেতদ্ব্রহ্ম নাম রূপমন্নং চ জায়তে॥৯
অন্বয়: যঃ (যিনি); সর্বজ্ঞঃ (সর্বজ্ঞ); সর্ববিৎ (সকল বিষয় [পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে] জানেন); যস্য (যাঁর); জ্ঞানময়ম্ (জ্ঞানময়); তপঃ (তপস্যা); তস্মাৎ (তা থেকে [পরব্রহ্ম]); এতৎ ব্রহ্ম (এই ব্রহ্ম [অপরা ব্রহ্ম অর্থাৎ হিরণ্যগর্ভ]); নাম (নাম); রূপম্ (রূপ); চ (এবং); অন্নম্ (নাম, রূপ ও অন্ন); জায়তে (জন্মায়)।
সরলার্থ: যিনি সর্বজ্ঞ, যিনি সর্ববিৎ, জ্ঞানই যাঁর তপস্যা সেই পরা ব্রহ্ম থেকেই এই অপরা ব্রহ্ম (হিরণ্যগর্ভ) এবং নাম, রূপ ও অন্নাদি এসেছে।
ব্যাখ্যা: ব্রহ্ম সর্বজ্ঞ—তিনি সব কিছু জানেন। ‘যস্য জ্ঞানময়ং তপঃ’—জ্ঞানই তাঁর একমাত্র তপস্যা। ব্রহ্ম যেহেতু সর্ব ব্যাপী সেহেতু তিনি সবই জানেন এবং সবই বুঝতে পারেন। ব্রহ্ম যেন জ্ঞানের সমুদ্র। আর এই সৃষ্টি বা এই প্রকাশ যেন ঐ সমুদ্রের তরঙ্গ। জগৎ এই জ্ঞানসমুদ্রের একটি তরঙ্গ মাত্র। কিন্তু এই জগৎ প্রকাশে ব্রহ্মের কোন চেষ্টার প্রয়োজন হয় না। তাঁর ক্ষুদ্র একটি চিন্তাই মুহূর্তের মধ্যে এই জগৎ রূপে নিজেকে প্রকাশ করে। এ জগতে যা কিছুর অস্তিত্ব আছে তার একটি নাম ও রূপ আছে। আর আছে অন্ন অর্থাৎ খাদ্য। নাম, রূপ এবং খাদ্য সবই ব্রহ্ম থেকে এসেছে। এই বৈচিত্রময় জগৎও ব্রহ্ম ছাড়া আর কিছুই নয়। এই জগতের উপাদান কারণ ও নিমিত্ত কারণ দুই-ই ব্রহ্ম। কেউ একজন ব্রহ্মকে সৃষ্টি করেছেন এবং পরে সেই ব্রহ্মই জগৎকে সৃষ্টি করেন—এ কথাটি ঠিক নয়। ব্রহ্ম নিজেই নিজেকে প্রকাশ করেন। নর, নারী, গাছপালা, জীবজন্তু, গ্রহনক্ষত্র, বাতাস, জল, আগুন ইত্যাদি নানারকমের বৈচিত্র আমরা দেখে থাকি। নামরূপ নিয়েই এই জগৎ। মাকড়সার জাল যেমন মাকড়সার দেহ থেকেই আসে, মাটি থেকে যেমন গাছপালা আসে, এবং জীবন্ত মানুষের দেহ থেকে যেমন কেশ ও লোম বার হয় ঠিক তেমনি সবকিছু এই ব্রহ্মের কাছ থেকেই আসে।
পরা ব্রহ্মই সর্বশ্রেষ্ঠ বা পরম। তিনি নির্গুণ তাই কোন বিশেষণ দ্বারা তাঁকে বিশেষিত করা যায় না। পরা ব্রহ্মের পরেই হল অপরা ব্রহ্ম। এই ব্রহ্ম সগুণ। এঁকে হিরণ্যগর্ভ বা ঈশ্বর বলা হয়ে থাকে।
মুণ্ডক উপনিষদের প্রথম মুণ্ডকের প্রথম অধ্যায় এইখানে সমাপ্ত।