তদেতদৃচাঽভ্যুক্তম্—
ক্রিয়াবন্তঃ শ্রোত্রিয়া ব্ৰহ্মনিষ্ঠাঃ
স্বয়ং জুহ্বত একৰ্ষিং শ্রদ্ধয়ন্তঃ।
তেষামেবৈতাং ব্রহ্মবিদ্যাং বদেত
শিরোব্রতং বিধিবদ্ যৈস্তু চীর্ণম্॥১০
অন্বয়: ঋচা (ঋক্-মন্ত্র দ্বারা); তৎ এতৎ (এই যে [সত্য]); অভ্যুক্তম্ ( প্রকাশিত হল); [যে] ক্রিয়াবন্তঃ (শাস্ত্রের নিয়ম মেনে যাঁরা কাজ করেছেন); শ্রোত্রিয়াঃ (বেদজ্ঞ); ব্রহ্মনিষ্ঠাঃ [পুরুষঃ] (ব্রহ্মনিষ্ঠ পুরুষরা); শ্রদ্ধয়ন্তঃ (শ্রদ্ধাবান হয়ে); স্বয়ম্ (নিজেই); একৰ্ষিম্ (একর্ষি নামক অগ্নিতে); জুহ্বতে (আহুতি দেন); যৈঃ তু (যাঁদের দ্বারা); বিধিবৎ (যথা বিধি); শিরোব্ৰতম্ (মস্তকে অগ্নি ধারণ পূর্বক যে ব্রত); চীৰ্ণম্ (অনুষ্ঠিত হয়েছে); তেষাম্ এব (তাঁদের কাছেই); এতাম্ (এই); ব্রহ্মবিদ্যাম্ (ব্রহ্মবিদ্যাকে); বদেত (বলবে)।
সরলার্থ: শাস্ত্র বলেন : যিনি শাস্ত্রের নিয়ম মেনে কর্ম করেন, শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন, ব্রহ্মনিষ্ঠ হন, একৰ্ষি যজ্ঞানুষ্ঠান করেন এবং শাস্ত্রীয় বিধি অনুযায়ী মস্তকে অগ্নি ধারণ করেন, তিনিই একমাত্র ব্রহ্মবিদ্যালাভের পক্ষে উপযুক্ত; অন্যরা নয়।
ব্যাখ্যা: ‘তৎ এতৎ ঋচা অভুক্ত’—ঋক্-বেদে একথাই বলা হয়েছে। উপনিষদ এখানে আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন যে, এই জ্ঞান সকলের জন্য নয়। তখনকার দিনে আচার্যরা এই জ্ঞানদানের ব্যাপারে গোপনীয়তা রক্ষা করতেন। ব্রহ্মজ্ঞান লাভের যোগ্যতা সকলের থাকে না। কে এই জ্ঞানলাভে সক্ষম? ‘ক্রিয়াবন্তঃ’—যাঁরা শাস্ত্র নির্দেশিত কর্ম সম্পন্ন করেছেন; ‘শ্রোত্রিয়াঃ’—যাঁরা শাস্ত্র অধ্যয়ন করেছেন; ‘ব্রহ্মনিষ্ঠাঃ’—যাঁদের মন ব্রহ্মে সমর্পিত; ‘স্বয়ং জুহুতে একৰ্ষিম্’—যাঁরা আন্তরিকতার সঙ্গে একৰ্ষি যজ্ঞানুষ্ঠান করেছেন। একৰ্ষি যজ্ঞ সম্বন্ধে আমরা এখন কিছুই জানি না, শুধু জানা যায় যজ্ঞটি বড়ই দুরূহ। ‘শ্ৰদ্ধয়ন্তঃ’—যাঁরা আন্তরিকতা সম্পন্ন। ‘শিরোব্রতম্’—যে যজ্ঞে যজমানকে মস্তকে অগ্নি ধারণ করতে হয়। ‘বিধিবৎ যৈঃ তু চীর্ণম্’—যাঁরা এই সব যজ্ঞ বিধি মতে পালন করেছেন। উপনিষদের মতে কেবলমাত্র এই সব মানুষই ব্রহ্মবিদ্যালাভের পক্ষে উপযুক্ত। সাধককে তাঁর কর্তব্য পালন করতে হবে এবং শ্রদ্ধা আন্তরিকতার সাথে এই বিদ্যার্জনে আগ্রহী হতে হবে। মূল কথাটি হল, যদি আমি সত্যিই ব্রহ্মকে জানতে চাই তবে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং কষ্টকে মেনে নিতে হবে। এভাবেই সাধক নিজেকে ব্রহ্মজ্ঞান লাভের জন্য প্রস্তুত করেন। এর ফলে সাধকের চিত্তশুদ্ধি হয়। আর জ্ঞান তখন আপনা আপনিই প্রকাশ পায়।