স যো হ বৈ তৎ পরমং ব্রহ্ম বেদ
ব্ৰহ্মৈব ভবতি নাস্যাব্রহ্মবিৎ কুলে ভবতি।
তরতি শোকং তরতি পাপ্মানং
গুহাগ্রন্থিভ্যো বিমুক্তোঽমৃতে ভবতি॥৯
অন্বয়: যঃ হ বৈ (যে কেউ); তৎ (সেই); পরমং ব্রহ্ম (পরব্রহ্মকে); বেদ (জানেন); সঃ (তিনি); ব্রহ্ম এব (ব্রহ্মই); ভবতি (হন); অস্য (এঁর); কুলে (বংশে); অব্ৰহ্মবিৎ ন ভবতি (কেউই অব্রহ্মবিদ্ হন না); সঃ (তিনি); শোকং তরতি (শোককে অতিক্রম করেন); পাপ্মানং তরতি (পাপকে অতিক্রম করেন); গুহাগ্রন্থিভ্যঃ (হৃদয়ের অজ্ঞানরূপ গ্রন্থি থেকে); বিমুক্তঃ [সন্] (সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হয়ে); অমৃতঃ (অমর); ভবতি (হন)।
সরলার্থ: যিনি পরব্রহ্মকে জানেন, তিনি ব্রহ্মই হয়ে যান, এবং তাঁর বংশে কেউ ‘অব্রহ্মবিদ্’ জন্মায় না। তিনি সব শোকদুঃখের পারে চলে যান। হৃদয়ের অজ্ঞানতাজনিত বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে তিনি অমৃতত্ব লাভ করেন।
ব্যাখ্যা: ‘সঃ যঃ হ বৈ ব্রহ্ম বেদ ব্ৰহ্মৈব ভবতি’—যিনি ব্রহ্মকে জানেন, তিনি ব্রহ্মই হয়ে যান। এই উপনিষদের শুরুতে যে প্রশ্ন করা হয়েছিল এই শ্লোকে তারই উত্তর দেওয়া হল। প্রশ্নটি ছিল : কি জানলে বা কাকে জানলে সব কিছুকে জানা যায়। এর উত্তরে উপনিষদ বলছেন : ‘যদি আমি ব্ৰহ্মকে জানি, তবে আমি ব্রহ্মাই হয়ে যাই। এবং তখনই আমি সবকিছুকে জানতে পারি।’
‘নাস্যাব্রহ্মবিৎ কুলে ভবতি’—পিতা যদি ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষ হন তবে তাঁর বংশের সকলেই ব্রহ্মজ্ঞ হবেন। এ কেমন করে সম্ভব? কারণ পিতার প্রভাব তাঁর চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। তাঁকে ঘিরে যাঁরা থাকেন তাঁরাও তখন ব্রহ্ম হয়ে যান। এই পরিবারের সকলেই ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করেন। এই জ্ঞান চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে প্রদীপ জ্বলছে তার চারপাশে কোথাও অন্ধকার থাকতে পারে কি? অনুরূপভাবে যখন আমি ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করি তখন আমার চারপাশের মানুষও এই জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়। এখানে একথাটিই বোঝানো হয়েছে।
‘শোকং তরতি’—তিনি শোকদুঃখের পারে যান। শুধুমাত্র দুঃখই নয়, তিনি সুখেরও পারে চলে যান। ‘পাপ্মানং তরতি’—তিনি পাপকে অতিক্রম করেন। একই সঙ্গে তিনি পুণ্যকেও অতিক্রম করেন। ‘গুহাগ্রন্থিভ্যঃ’, গুহা বলতে এখানে হৃদয়কে বোঝানো হয়েছে। আত্মার অবস্থান তো এই হৃদয়ে। আমার স্বরূপজ্ঞান না হওয়া পর্যন্ত আমি অজ্ঞানতার জালে বদ্ধ।
‘অমৃতঃ ভবতি’—তিনি অমৃতত্ব লাভ করেন। তিনি অমর হন, কারণ তিনি যে ব্রহ্মই হয়ে গেছেন। এ অনেকটা সাগরে জলবিন্দু পড়ার মতো। সাগরে জলবিন্দু পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা সাগরের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। সেইভাবে মানুষ যখন ব্রহ্মকে জানেন তখন তিনি ব্রহ্মই হয়ে যান। এই জন্যই উপনিষদ সকলকে আত্মজ্ঞান লাভে সচেষ্ট হতে বলছেন। আমাদের সকল সমস্যার মূলে আছে অবিদ্যা অর্থাৎ অজ্ঞানতা। এই অজ্ঞানতাকে দূর করতে পারলেই মুক্তির পথ খুলে যায়। এই অবস্থায় মানুষ পরম শান্তি ও আনন্দ লাভ করেন।