সত্যেন লভ্যস্তপসা হ্যেষ আত্মা
সম্যগ্জ্ঞানেন ব্রহ্মচর্যেণ নিত্যম্।
অন্তঃশরীরে জ্যোতির্ময়ো হি শুভ্রো
যং পশ্যন্তি যতয়ঃ ক্ষীণদোষাঃ॥৫
অন্বয়: এষঃ জ্যোতির্ময়ঃ শুভ্রঃ হি আত্মা (এই জ্যোতির্ময় শুভ্র আত্মা); অন্তঃশরীরে (দেহের অভ্যন্তরে); নিত্যম্ (সর্বদা); সত্যেন (কথায় ও কাজে সত্যনিষ্ঠার দ্বারা); তপসা (আত্মসংযমের দ্বারা); ব্রহ্মচর্যেণ (ব্রহ্মচর্যের দ্বারা); সমগ্জ্ঞানেন (যথার্থ জ্ঞানের দ্বারা); লভ্যঃ (লাভ করা যায়); [ন অন্যথা (অন্য উপায়ের দ্বারা নয়)]; যম্ (আত্মাকে); ক্ষীণদোষাঃ (যাঁদের মন শুদ্ধ ও অনাসক্ত); যতয়ঃ (সাধকগণ); পশ্যন্তি (অনুভব করেন)।
সরলার্থ: দেহের মধ্যে হৃৎপদ্মে এই শুদ্ধ ও জ্যোতির্ময় পরমাত্মাকে উপলব্ধি করতে হবে। কায়মনোবাক্যে সত্যের অনুসরণ, স্বরূপ চিন্তা এবং আত্মসংযম ও ব্রহ্মচর্য অভ্যাসের দ্বারাই আত্মজ্ঞান লাভ করতে হবে। সত্যদ্রষ্টা ঋষিগণ এই পরমাত্মাকে উপলব্ধি করেন।
ব্যাখ্যা: আত্মোপলব্ধির জন্য সাধককে যেসব ধাপ অতিক্রম করতে হয়, এই শ্লোকে সেকথাই বলা হয়েছে। প্রথমত এবং প্রধানত সাধক কায়মনোবাক্যে (অর্থাৎ কথায়, কাজে এবং আচরণে) সত্যনিষ্ঠ হবেন। সত্যকে তিনি সবার ওপরে স্থান দেন। সত্য রক্ষার জন্য তিনি কোন কিছুর সাথে আপস করেন না। কারণ, সত্যই তাঁর ঈশ্বর। সাধককে কঠোর তপস্যা করতে হবে, এবং সব সময় আত্মচিন্তায় মগ্ন থাকতে হবে। কৃচ্ছ্রতা বলতে কিন্তু আচার-অনুষ্ঠানকে বোঝায় না, এর অর্থ আত্মসংযম। দেহ এবং মন তখন সাধকের বশে থাকে। খুব সহজ কাজ নয়, কিন্তু একাজ খুবই জরুরী। সাধক বহু বছরের কঠোর সংগ্রামের ফলে এই আত্মসংযম লাভ করেন। এই সংগ্রামই হচ্ছে কৃচ্ছ্রতা। আত্মসংযমের আর একটি তাৎপর্য হল মনঃসংযোগ। সাধক লক্ষ্যে অবিচল থেকে তাঁতে মনকে একাগ্র করেন।
আত্মজ্ঞান লাভ করাই আমাদের জীবনের লক্ষ্য; কিন্তু কোথায় আছেন এই আত্মা? এর প্রকৃতিই বা কেমন? সকলের হৃৎপদ্মে এই আত্মা বিরাজিত। আত্মা স্বয়ং প্রকাশিত ও শুদ্ধ। যেসব যোগিগণের মন রাগ-দ্বেষ, লোভ, স্বার্থপরতা ইত্যাদি মলিনতা থেকে মুক্ত তাঁরা নিজ হৃদয়ে আত্মাকে উপলব্ধি করেন। চিত্তশুদ্ধি হলে সাধক সত্যকে বুঝতে পারেন। ‘সত্য’ বলতে এখানে ‘পরম সত্য’কে বোঝানো হয়েছে। এই পরম সত্য যে কি তা কেউ জানে না। এই মুহূর্তে আমরা সত্য বলতে যা বুঝি সেই আপেক্ষিক সত্যকে ধরেই পরম সত্যের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এই সত্যনিষ্ঠাই ধর্মীয় জীবনের মূল কথা।