তস্মাচ্চ দেবা বহুধা সংপ্রসূতাঃ
সাধ্যা মনুষ্যাঃ পশবো বয়াংসি।
প্রাণাপানৌ ব্রীহিযবৌ তপশ্চ
শ্রদ্ধা সত্যং ব্রহ্মচর্যং বিধিশ্চ॥৭
অন্বয়: তস্মাৎ চ (এবং তাঁর থেকে [অর্থাৎ ব্রহ্ম থেকে]); বহুধা (বহু প্রকার); দেবাঃ ([বসু প্রভৃতি] দেবতাগণ); সংপ্রসূতাঃ (সম্যক্-রূপে উৎপন্ন হয়েছে); সাধ্যাঃ (সাধ্য দেবতাগণ); মনুষ্যাঃ (মানুষেরা); পশবঃ (পশুসমূহ); বয়াংসি (পাখীরা); প্রাণাপানৌ (প্রাণ এবং অপানবায়ু; ব্রীহিযবৌ (ধান ও যব); তপঃ (তপস্যা); শ্রদ্ধা (আস্তিক্য বুদ্ধি; বিশ্বাস); সত্যম্ (সত্য); ব্রহ্মচর্যম্ (ব্রহ্মচর্য); চ (এবং); বিধিঃ (শাস্ত্রের নিয়ম [সম্যক্-রূপে উৎপন্ন হয়েছে])।
সরলার্থ: সেই পুরুষ (হিরণ্যগর্ভ) থেকে বিবিধ দেবদেবী ও বসুগণ এসেছেন। এভাবে পরপর এসেছেন সাধ্যগণ (অন্যান্য দেবদেবীর চেয়ে উচ্চস্তরের দেবতা, সংখ্যায় বারজন), মানুষ, প্রাণী বর্গ, পক্ষিকুল, প্রাণ ও অপানরূপ শ্বাসবায়ু, ধান-গম, তপস্যা, শ্রদ্ধা, সত্য, ব্রহ্মচর্য, এবং শাস্ত্রবিধি সকল।
ব্যাখ্যা: এই সব কিছু, জগৎ ও তার সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয়সকল ব্রহ্ম থেকে এসেছে। উপনিষদ বলছেন, ব্রহ্মকে জানলেই সব জানা যায়। শ্রীরামকৃষ্ণ উপমা দিচ্ছেন—হাঁড়িতে ভাত রান্না হচ্ছে। ভাত সেদ্ধ হয়েছে কিনা জানতে গেলে এক কণা ভাত টিপে দেখলেই যথেষ্ট; নরম হলে বোঝা যায় ভাত তৈরী। হাঁড়ির সব ভাত আলাদাভাবে টিপে দেখার প্রয়োজন হয় না। ব্রহ্মের বেলাতেও একই কথা খাটে। উপনিষদ বলছেন, জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয় জানার প্রয়োজন নেই। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, দেবদেবী, পঞ্চভূত, নরনারী, জীবজন্তু, উদ্ভিদ জগৎ—এই সব কিছুর মধ্য দিয়েই ব্রহ্মের প্রকাশ। সেইজন্য ব্রহ্মকে জানলেই সব জানা হয়ে যায়।