তস্মাদগ্নিঃ সমিধো যস্য সূর্যঃ।
সোমাৎপর্জন্য ওষধয়ঃ পৃথিব্যাম্।
পুমান্ রেতঃ সিঞ্চতি যোষিতায়াং
বহ্বীঃ প্রজাঃ পুরুষাৎসংপ্রসূতাঃ॥৫
অন্বয়: তস্মাৎ (তাঁর থেকে [অর্থাৎ সেই পুরুষ থেকে]); অগ্নিঃ (দ্যুলোক [জন্ম নেয়]); যস্য (যার অর্থাৎ এই দ্যুলোকের); সমিধঃ (ইন্ধন [হল]); সূর্যঃ (সূর্য); সোমাৎ ([দ্যুলোক থেকে যার জন্ম] সেই চন্দ্র থেকে); পর্জন্যঃ (মেঘ [অর্থাৎ বৃষ্টি হয়]); পৃথিব্যাম্ (পৃথিবীতে); ওষধয়ঃ (ওষধি বৃক্ষসমূহ); [জন্মায়] পুমান্ (মানুষ); যোষিতায়াম্ (স্ত্রীতে); রেতঃ (শুক্র); সিঞ্চতি (সিঞ্চন করে); [এই রূপে] পুরুষাৎ (পরমপুরুষ অক্ষর থেকে); বহ্বীঃ (অনেক); প্রজাঃ ( জীবসমূহ); সংপ্রসূতাঃ (জন্ম নেয়)।
সরলার্থ: সূর্য যেন ওই অগ্নির (অর্থাৎ দ্যুলোকের) ইন্ধন। ওই অগ্নি বা দ্যুলোক এই মহান পুরুষ থেকে এসেছে। চন্দ্র এসেছে দ্যুলোক থেকে এবং বৃষ্টি চন্দ্র থেকে। আবার এই বৃষ্টি থেকে পৃথিবীতে শস্যাদির জন্ম। শস্য থেকে উৎপন্ন পুরুষবীর্য রমণীতে সিঞ্চিত হয়। এইভাবে সেই মহান পুরুষ (হিরণ্যগর্ভ, সগুণ ব্রহ্ম, পরমাত্মা) থেকে পরম্পরাক্রমে সর্ব বস্তুর উদ্ভব।
ব্যাখ্যা: ধরা যাক, কোন সৎ ব্যক্তি যজ্ঞকর্ম সম্পাদন করেছেন। মৃত্যুর পরে তিনি স্বর্গলোকে যাবেন এবং কিছু কাল স্বর্গসুখ ভোগ করবেন। কিন্তু সৎকর্মের ফল নিঃশেষিত হলে তাঁকে আবার এই পৃথিবীতে ফিরে আসতে হবে। এই প্রত্যাবর্তন কি ভাবে হয়? উপনিষদ বলেন, মৃত্যুর পর মানুষ প্রথমে মেঘলোকে যায়। মেঘ থেকে যখন বৃষ্টি হয় তখন সেই বৃষ্টিধারার সঙ্গে সে পৃথিবীতে নেমে আসে। সেই বৃষ্টির জল উদ্ভিদ শোষণ করে। সেই সঙ্গে জীবের সূক্ষ্ম দেহও উদ্ভিদে প্রবেশ করে। সেই উদ্ভিদজাত শস্য নরনারী খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। সেখান থেকেই আবার মানুষের পুনর্জন্ম হয়। পুনর্জন্ম প্রক্রিয়াটি এখানে এই ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কেউ কেউ বলতেই পারেন, ব্যাখ্যাটি বিজ্ঞানভিত্তিক নয়, অতএব অগ্রাহ্য। কিন্তু এখানে মূল কথাটি হল, মানুষের পুনর্জন্ম হয় এবং এর থেকে তার সহজে নিস্তার নেই। কিভাবে পুনর্জন্ম ঘটে সে প্রসঙ্গ আলাদা।
‘প্রজাঃ’ অর্থাৎ যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে; ‘বহ্বীঃ’—বহু। এই সব কিছু কোথা থেকে আসে? পুরুষ তথা ব্রহ্ম থেকে। মাকড়সা যেমন জাল বিস্তার করে এবং সেই জাল ক্রমশ বড় হতে থাকে ঠিক তেমনি ব্রহ্ম যেন নিজেকে বিস্তার করেছেন। এই ভাবে প্রাণী পরম্পরার মধ্য দিয়ে ব্রহ্ম আপনাকে প্রকাশ করেন।