অগ্নির্মূর্ধা চক্ষুষী চন্দ্ৰসূর্যৌ
দিশঃ শ্রোত্রে বাগ্নিবৃতাশ্চ বেদাঃ।
বায়ুঃ প্রাণো হৃদয়ং বিশ্বমস্য
পদ্ভ্যাং পৃথিবী হ্যেষ সর্বভূতান্তরাত্মা॥৪
অন্বয়: অস্য (যাঁর); অগ্নিঃ (দ্যুলোক); মূর্ধা (মস্তক); চন্দ্ৰসূর্যৌ (চাঁদ এবং সূর্য); চক্ষুষী (দুটি চোখ); দিশঃ (দিক সমূহ); শ্রোত্রে (দুটি কান); চ (এবং); বিবৃতাঃ বেদাঃ (প্রকটিত বেদ সমূহ); বাক্ (বাক্য); বায়ুঃ (বায়ু); প্রাণঃ (প্রাণ); বিশ্বম্ (বিশ্ব); হৃদয়ম্ (হৃদয়); পৃথিবী (পৃথিবী); পদ্ভ্যাম্ (দুটি পায়ের জন্য [অর্থাৎ দুটি পায়ের জন্যই পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে]); এষঃ হি (ইনিই); সর্বভূতান্তরাত্মা (সর্বভূতের অন্তরাত্মা)।
সরলার্থ: স্বর্গ তাঁর মস্তক, চন্দ্র সূর্য তাঁর দুই চোখ, দিক সকল তাঁর দুই কান, প্রকটিত বেদসমূহ তাঁর বাক্য, বায়ু তাঁর নিঃশ্বাস, বিশ্ব তাঁর হৃদয় এবং তাঁর চরণ-যুগলের জন্যই এই পৃথিবী। তিনিই সর্বভূতের অন্তরতম আত্মা।
ব্যাখ্যা: আমাদের সম্মুখে ছড়ানো রয়েছে এই সুন্দর পৃথিবী। কিন্তু পৃথিবীর সামগ্রিক রূপ আমাদের দৃষ্টিতে ধরা পড়ে না। এর সামান্য অংশ মাত্র আমরা দেখতে পাই। আমরা জানি, আমাদের দৃষ্টিসীমার বাইরে অন্যান্য বহু ছায়াপথ রয়েছে। সূর্যকে দেখে আমাদের মনে হয়: ‘আহা! কি অপূর্ব!’ কিন্তু আবার একথাও জানি যে, এই সূর্যের চেয়ে বৃহত্তর এবং আরও শক্তিশালী অনেক সূর্য আছে। উপনিষদ আমাদের কল্পনা করতে বলছেন, দ্যুলোক (অগ্নিঃ) ব্রহ্মের মস্তক (মূর্ধা) মাত্র। চন্দ্রাতপ সদৃশ নক্ষত্র-খচিত আকাশ তাঁর শির, সূর্য এবং চন্দ্র তাঁর দুই চোখ, চারটি দিক (দিশঃ) তাঁর কান। ‘বিবৃতাঃ বেদাঃ’—ব্রহ্মের বাক্-রূপে বেদসমূহের প্রকাশ। ‘বায়ুঃ প্রাণঃ’—বাতাস তাঁর প্রাণবায়ু এবং এই বিশ্ব তাঁর হৃদয়। ‘পদ্ভ্যাং পৃথিবী’—তাঁর পদযুগলের জন্য এই পৃথিবী। ‘এষঃ সর্বভূতান্তরাত্মা’—তিনিই সর্ববস্তুর অন্তরাত্মা, আদি কারণ, সারাৎসার। জগতে সকল অস্তিত্বের মূল এই ব্রহ্মোই প্রতিষ্ঠিত।