যস্যাগ্নিহোত্রমদর্শমপৌর্ণমাস-
মচাতুর্মাস্যমনাগ্রয়ণমতিথিবর্জিতং চ।
অহুতমবৈশ্বদেবমবিধিনা হুত-
মাসপ্তমাংস্তস্য লোকান্ হিনস্তি॥৩
অন্বয়: যস্য (যার অর্থাৎ যে যজমানের); অগ্নিহোত্রম্ (অগ্নিহোত্র যাগটি); অদর্শম্ (দর্শ নামক যাগ বর্জিত); অপৌর্ণমাসম্ অচাতুর্মাস্যম্ অনাগ্রয়ণম্ (পৌর্ণমাস, চাতুর্মাস্য এবং আগ্রয়ণ কর্মবর্জিত); অতিথিবর্জিতম্ (অতিথি সৎকার না করে); অবৈশ্বদেবম্ (বৈশ্বদেব কর্মশূন্য); অহুতম্ (অকালে আহুতি দেওয়া); অবিধিনা (অশাস্ত্রীয় ভাবে); হুতম্ (আহুতি যুক্ত), তস্য (তার [সেই যজমানের]); আসপ্তমান্ লোকান্ (সপ্তলোক পর্যন্ত); হিনস্তি (বিনষ্ট করে [অর্থাৎ যজ্ঞের আনুষঙ্গিক যা-যা করণীয় সেগুলি না করার জন্যে যজমানের সপ্তলোক তার হাতের বাইরে চলে যায়])।
সরলার্থ: (শাস্ত্রের নিয়ম না মেনে অর্থাৎ) দর্শ, পৌর্ণমাস, চাতুর্মাস্য এবং আগ্রয়ণ ইত্যাদি আনুষঙ্গিক যজ্ঞ সম্পন্ন না করে, অতিথি সৎকার না করে, অথবা বৈশ্যদেব আচার না মেনে যদি কেউ অগ্নিহোত্র যজ্ঞ করেন তাহলে সেই যজ্ঞ যথাযথ হয় না। এর ফলে যজমানের সপ্তলোক পর্যন্ত নাশ হয়।
ব্যাখ্যা: ধরা যাক নিখুঁতভাবে যজ্ঞ করা সম্ভব হল না। এই শ্লোকে সেই বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। সারা জীবন ধরে ব্রাহ্মণরা অগ্নিহোত্র যজ্ঞ করে থাকেন। এখনও অনেক ব্রাহ্মণ পরিবার আছেন যাঁরা এই অগ্নিহোত্র যজ্ঞ করেন। তাঁদের ঘরে পুরুষ পরম্পরা যজ্ঞাগ্নি জ্বলতে থাকে। প্রতিদিন এই অগ্নিতে আহুতি দিতে হয়। অগ্নিহোত্র যজ্ঞ অতি দুরূহ। এই যজ্ঞ করতে গেলে শুধু অগ্নিহোত্র করলেই হবে না। অন্যান্য আনুষঙ্গিক যজ্ঞ যথা—দর্শ, পৌর্ণমাস, চাতুর্মাস্য, আগ্রয়ণ এবং বৈশ্বদেব অনুষ্ঠানও এর সঙ্গে পালন করতে হবে। আবার যজ্ঞ চলাকালীন অতিথি সৎকার অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু কেউ যদি এই অনুষ্ঠান আরম্ভ করেও শাস্ত্রের নিয়ম সঠিকভাবে পালন করতে ব্যর্থ হন? সে ক্ষেত্রে তাঁর কী হবে? ‘আসপ্তমান্ লোকান্ হিনস্তি’ অর্থাৎ পৃথিবী থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন সাতটি লোক তিনি হারাবেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ বলছেন: কলিযুগে এই সব যজ্ঞ করা কঠিন। কর্মকাণ্ডের অনুষ্ঠান এই যুগের উপযোগী নয়। এই যজ্ঞ একবার শুরু করলে এর সব নিয়মকানুন নিখুঁত ভাবে পালন করতে হয়। শাস্ত্রীয় বিধি লঙ্ঘন হলে যজমানের সর্বনাশ। শাস্ত্র বলেন, এর ফলে জীবনে যত পুণ্য কর্মের ফল সব নষ্ট হয়। শ্রীরামকৃষ্ণ বলছেন : এ যুগে মানুষ এত ব্যস্ত যে, শাস্ত্রের কঠোর নিয়মকানুন পালন করা তার পক্ষে দুঃসাধ্য। কিন্তু কর্ম সবাইকেই করতে হয়। আমরা যে চিন্তা করি তাও একপ্রকার কর্ম। কাজেই কর্মছাড়া আমরা এক মুহূর্তও থাকতে পারি না। কিন্তু শাস্ত্রবিহিত কর্মযজ্ঞ করা এ যুগে আর সম্ভব নয়।