তস্মৈ স হোবাচ। দ্বে বিদ্যে বেদিতব্যে
ইতি হ স্ম যদ্ব্রহ্মবিদো বদন্তি পরা চৈবাপরা চ॥৪
অন্বয়: তস্মৈ (তাঁকে অর্থাৎ শৌনককে); সঃ (তিনি অর্থাৎ অঙ্গিরস); হ উবাচ (বললেন); ইতি হ স্ম (এই যে কথাটি); ব্রহ্মবিদঃ (ব্রহ্মজ্ঞানীরা); বদন্তি (বলেন); দ্বে (দুটি); বিদ্যে (বিদ্যা); বেদিতব্যে (জানতে হবে [বিদ্যা দুটি]); যৎ পরা (শ্রেষ্ঠ [আধ্যাত্মিক] জ্ঞান, ব্রহ্মজ্ঞান [‘পরা পরম-আত্মা’, পরম অর্থাৎ পরমাত্মা]); চ এব (এবং); অপরা চ (নিকৃষ্ট [পার্থিব] জ্ঞান, এই দৃশ্যমান জগতের জ্ঞান)।
সরলার্থ: অঙ্গিরস শৌনককে বললেন, ‘ব্রহ্মজ্ঞানীরা বলেন জ্ঞান দুই প্রকার, ব্রহ্মজ্ঞান অর্থাৎ পরম-জ্ঞান; আর আপেক্ষিক জ্ঞান অর্থাৎ এই দৃশ্যমান জগৎ সম্পকীয় জ্ঞান।’
ব্যাখ্যা: আধ্যাত্মিক ও জাগতিক এই দুই প্রকার জ্ঞানই অর্জন করতে হবে। জাগতিক জ্ঞান বলতে এই দৃশ্যমান জগৎ-সংক্রান্ত জ্ঞান বোঝায়, এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞান বলতে ব্রহ্মজ্ঞানকে বোঝায়। জাগতিক জ্ঞান বহুর জ্ঞান; আধ্যাত্মিক জ্ঞান হল একের জ্ঞান। জাগতিক জ্ঞানের নিজস্ব কোন মূল্য নেই, আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভের সহায়ক হিসাবে এর যা কিছু মূল্য। পার্থিব জ্ঞানকে আধ্যাত্মিক জ্ঞানের সাথে যুক্ত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই দৃশ্যমান জগৎ ব্রহ্মেরই প্রকাশ। আর এই অর্থেই এ জগৎকে উপেক্ষা করা যায় না। জ্ঞান জ্ঞানই, তা পার্থিবই হোক বা আধ্যাত্মিকই হোক। কিন্তু জাগতিক জ্ঞান মানুষকে শান্তি বা আনন্দ দিতে পারে না। এই জ্ঞান আমাদের জীবনে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেয় বটে কিন্তু তা চিরস্থায়ী নয়। পার্থিব স্বাচ্ছন্দ্য আমাদের সাময়িক তৃপ্তি দিতে পারে কিন্তু অচিরেই সেই তৃপ্তির নাশ হয়। একমাত্র আধ্যাত্মিক জ্ঞানই আমাদের চিরস্থায়ী শান্তি ও আনন্দ দিতে পারে।