শৌনকো হ বৈ মহাশালোঽঙ্গিরসং
বিধিবদুপসন্নঃ পপ্রচ্ছ।
কস্মিন্নু ভগবো বিজ্ঞাতে সর্বমিদং
বিজ্ঞাতং ভবতীতি॥৩
অন্বয়: মহাশালঃ (বিশিষ্ট গৃহস্থ); শৌনকঃ (শুনক পুত্র); হ বৈ (প্রসিদ্ধি অর্থে); বিধিবৎ (শাস্ত্র বিধি অনুসারে); অঙ্গিরসম্ উপসন্নঃ (অঙ্গিরসের কাছে উপস্থিত হয়ে); পপ্রচ্ছ (জিজ্ঞাসা করলেন); ভগবঃ (হে ভগবান); কস্মিন্ নু বিজ্ঞাতে (কি জানলে); ইদম্ (এই); সর্বম্ (সব কিছু); বিজ্ঞাতং ভবতি ইতি (জানা যায়)।
সরলার্থ: শাস্ত্রবিধি অনুসারে ব্রহ্মজ্ঞান লাভের জন্য বিশিষ্ট গৃহী শৌনক ঋষি অঙ্গিরসের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে প্রভু, কি জানলে বা কোন্ বস্তুকে জানলে, সব কিছুকে (এই জগৎ) বিশেষ রূপে জানা যায়?’
ব্যাখ্যা: শৌনক উত্তম গৃহী। যিনি সকল কর্তব্য ঠিক ঠিকভাবে সম্পন্ন করেছেন, এবং পরম জ্ঞান লাভের জন্য যাঁর মন প্রস্তুত, তিনিই উত্তম গৃহী। এই পরম জ্ঞান শুধু ঋষি এবং সংসার ত্যাগী সন্ন্যাসীদের জন্যই নয়। সংসারের সকল কর্তব্য যথাবিধি করেছেন এমন গৃহীও এই জ্ঞানলাভের অধিকারী। গৃহী ব্যক্তি যখন নিখুঁতভাবে কর্তব্য পালন করেন তখন তাঁর চিত্তশুদ্ধি হয়। তিনি তখন বুঝতে পারেন তিনি এই দেহ নন। মনও তখন তাঁর বশে। এই হল পরম জ্ঞান লাভের উপযুক্ত ক্ষণ।
এই জ্ঞান অর্জনের জন্য গুরুর কাছে যেতে হবে। তাই শৌনক বিধিমতে অর্থাৎ শাস্ত্রীয় নির্দেশ অনুযায়ী যজ্ঞের কাঠ নিয়ে অঙ্গিরসের কাছে গেলেন। যজ্ঞের কাঠ হাতে নিয়ে গুরুর কাছে যাওয়া বিনয় ও আত্মসমর্পণের প্রতীক। গুরু সব শিষ্যকেই এই জ্ঞান দেন না। শিষ্যকে পরীক্ষা করে উপযুক্ত বলে মনে হলেই এই জ্ঞান দান করেন।
শৌনক গুরুকে একটি চমৎকার ও কঠিন প্রশ্ন করলেন: ‘কোন্ বস্তুকে জানলে এই জগৎ-চরাচরের সবকিছুকে জানা যায়? অনুগ্রহ করে আমাকে সেই শিক্ষা দিন, যার ফলে আমি এই জগৎকে জানতে পারি। কেউ কেউ বলেন যে, বিজ্ঞানকে জানতে গেলে গণিতবিদ্যাকে অবশ্যই জানতে হবে। কারণ অঙ্কই বিজ্ঞান জগতে ঢোকার চাবিকাঠি। অনুরূপভাবে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এমন কোন জ্ঞান আছে কি যা লাভ করলে আমি সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডকে জানতে পারব? তাই কথোপকথন শুরু হচ্ছে সরাসরিভাবে—‘আমার কি করা উচিত? আমি আর ঘুরে বেড়াতে পারছি না। আমি সোজাসুজি সত্যকে জানতে চাই। কি জানলে বা কাকে জানলে এই দৃশ্যমান জগতের সবকিছুকে আমি জানতে পারব? অনুগ্রহ করে আমাকে সেই শিক্ষা দিন।’ এটাই হল মূল জিজ্ঞাসা।