ওঁ ব্রহ্মা দেবানাং প্রথমঃ সংবভূব
বিশ্বস্য কর্তা ভুবনস্য গোপ্তা।
স ব্ৰহ্মবিদ্যাং সর্ববিদ্যাপ্রতিষ্ঠা-
মথর্বায় জ্যেষ্ঠপুত্ৰায় প্ৰাহ॥১
অন্বয়: ব্রহ্মা (ব্রহ্মা); দেবানাম্ (দেবতাগণের মধ্যে); প্রথমঃ (প্রথমে); সংবভূব (সম্যক্-রূপে অভিব্যক্ত হলেন); সঃ (তিনি); বিশ্বস্য (জগতের); কর্তা (স্রষ্টা); ভুবনস্য (সৃষ্টির); গোপ্তা (পালয়িতা); সর্ববিদ্যা-প্রতিষ্ঠাম্ (সকল বিদ্যার আশ্রয় স্বরূপ); ব্রহ্মবিদ্যাম্ (ব্রহ্মবিদ্যা [তিনি]); জ্যেষ্ঠপুত্ৰায় (জ্যেষ্ঠপুত্র); অথর্বায় (অথর্বাকে); প্রাহ (বলেছিলেন)।
সরলার্থ: দেবগণের মধ্যে যিনি প্রথম প্রকাশিত তিনিই ব্রহ্মা। তিনিই এই জগৎ চরাচরের স্রষ্টা ও আশ্রয়। ব্রহ্মজ্ঞানই অপর সকল জ্ঞানের উৎস। ব্রহ্মা তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র অথর্বাকে এই জ্ঞান দান করেন।
ব্যাখ্যা: ব্রহ্মের সম্বন্ধে আমরা কিছুই জানি না। তিনি নামরূপহীন। তিনি বাক্যমনাতীত। তাঁকে বর্ণনা করা যায় না। তিনি নির্গুণ এবং অব্যক্ত।
কিন্তু মায়াশক্তির দ্বারা তিনি নিজেকে প্রকাশ করেন। এই জগতে যা কিছু আছে তিনিই তার আদি কারণ এবং তাঁরই অপর নাম ব্রহ্মা বা প্রজাপতি। ব্রহ্মার জন্ম হয়নি। কারণ ব্রহ্মা ‘জাত’ হলে তাঁর নিশ্চয়ই পিতামাতা আছে। তাহলে প্রশ্ন জাগে, এই পিতামাতারও আবার পিতামাতা আছে। আবার তাঁরও আছে, এভাবে চলতেই থাকবে। ব্রহ্মাই ব্রহ্মের প্রথম প্রকাশ এবং দেবগণের মধ্যেও ইনি প্রথম। তিনিই এই জগৎকে সৃষ্টি করেছেন, পালন করছেন, আবার তাঁকে আশ্রয় করেই এ জগৎ রয়েছে।
যেহেতু বেদসমূহ ব্রহ্মার কাছ থেকে এসেছে সেহেতু ব্রহ্মবিদ্যা বা ব্রহ্মজ্ঞানের তিনিই উৎস। ঋষিদের মধ্যে অথর্বাই প্রথম ঋষি। তাই তাঁকে ব্রহ্মার প্রথম সন্তান বলা হয়। কথিত আছে, ব্রহ্মা এই জ্ঞান (ব্রহ্মজ্ঞান) অথর্বাকে দান করেন। সকল জ্ঞানের উৎস বা ভিত্তি হল এই ব্রহ্মজ্ঞান। তাই তাকে ‘সর্ববিদ্যা-প্রতিষ্ঠাম্’ বলা হয়। ব্রহ্মই পরমসত্য। তিনিই সব কিছুর আশ্রয়। তিনি আছেন বলেই সব কিছু আছে। ব্রহ্মই সকল জ্ঞানের ভিত্তিস্বরূপ।