তস্মৈ স হোবাচ। ইহৈবান্তঃশরীরে সোম্য স পুরুষো
যস্মিন্নেতাঃ ষোড়শকলাঃ প্ৰভবন্তীতি॥২
অন্বয়: সঃ তস্মৈ হ উবাচ (তিনি [পিপ্পলাদ] তাঁকে বললেন); সোম্য (হে সৌম্য); ইহ এব অন্তঃশরীরে (এখানে হৃৎপদ্মাকাশে); সঃ পুরুষঃ (সেই পরমাত্মা [আছেন]); যস্মিন্ (যাতে); এতাঃ ষোড়শকলাঃ (এই ষোড়শকলা যেমন প্রাণ); প্রভবন্তি (উৎপন্ন হয়)।
সরলার্থ: পিপ্পলাদ তাঁকে বললেন, হে সৌম্য, দেহের মধ্যে হৃৎপদ্মকাশে পরমাত্মা বিরাজিত। এই ষোলকলা (যেমন প্রাণ) পরমাত্মার কাছ থেকেই এসেছে।
ব্যাখ্যা: ‘পুরুষ’ কথার অর্থ হল ‘অন্তরতম সত্তা’, যা আমাদের সকলের মধ্যে রয়েছে। ‘পুর’ শব্দের অর্থ আবাস। আর ‘শী’ অর্থ হল যা শায়িত বা বিশ্রাম নিচ্ছে। হৃদয়কে অনেকসময় ‘হৃৎপদ্ম’ বলা হয় কারণ মনে করা হয় হৃদয়ের আকৃতি পদ্মের মতো। ‘পুরুষ’ এই হৃদয়াকাশেই বিরাজ করেন। ঘটাকাশ আর পটাকাশ, একই আকাশ ঘটের মধ্যেও রয়েছে আবার বাইরেও রয়েছে। ঠিক তেমনি পুরুষ বা ব্রহ্ম প্রত্যেকের ভেতরেও রয়েছেন আবার বাইরেও রয়েছেন। অর্থাৎ তিনিই সর্বত্র বিরাজ করছেন।
এই পুরুষই ষোলকলাবিশিষ্ট। ‘কলা’ শব্দটির অর্থ হল অঙ্গ বা অংশ। এ যেন বীজ যার থেকে অঙ্কুর বেরিয়েছে। পুরুষ হলেন সেই বীজ যা থেকে এই ষোলকলা-বিশিষ্ট জগতের সৃষ্টি হয়েছে। এরা (এই জগৎ) বীজ থেকে আলাদা নয়। ব্রহ্ম নিজেকে এই জগরূপে প্রকাশ করেছেন।
উপনিষদ এখানে ষোলকলাবিশিষ্ট পুরুষ বলতে সগুণ ব্রহ্মের কথা বলেছেন। বস্তুত এই সমগ্র জগৎ ব্রহ্মের উপাধিমাত্র। এ জগৎ ব্রহ্মের ওপর আরোপিত (অধ্যারোপ)। ব্রহ্মই এ জগতের আশ্রয়।
শঙ্করাচার্য একথাই আমাদেরকে বিশেষভাবে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন যে, কোনকিছুই ব্রহ্মকে প্রভাবিত করতে পারে না। ব্রহ্ম ব্রহ্মই থাকেন, যা নির্গুণ, নিরাকার। কোনও বিশেষণের দ্বারা ব্রহ্মকে বিশেষিত করা যায় না। যদিও এ জগৎরূপে তিনি নিজেকেই প্রকাশ করে থাকেন। এ জগৎ ব্রহ্মের কাছ থেকেই আসে। আবার ব্রহ্মেই লয় হয়।