বিজ্ঞানাত্মা সহ দেবৈশ্য সর্বৈঃ প্রাণা ভূতানি সম্প্রতিষ্ঠন্তি যত্র।
তদক্ষরং বেদয়তে যস্তু সোম্য স সর্বজ্ঞঃ সর্বমেবাবিবেশ ইতি॥১১
অন্বয়: সোম্য (হে সৌম্য); বিজ্ঞানাত্মা (জীবাত্মা [যিনি সবসময় সচেতন]); প্রাণাঃ (দেবতাগণ অর্থাৎ ইন্দ্রিয়ের নিয়ামক); ভূতানি চ (উপাদানসমূহ যেমন পৃথিবী); সর্বৈঃ দেবৈঃ সহ (সকল ইন্দ্রিয়সহ); যত্র (যার মধ্যে অবিনাশী আত্মা, অর্থাৎ পরমাত্মা); সম্প্রতিষ্ঠন্তি (বিশ্রাম গ্রহণ করে); তৎ অক্ষরম্ (সেই পরমাত্মা); যঃ তু বেদয়তে (যিনি জানেন); সঃ (তিনি); সর্বজ্ঞঃ (সর্বজ্ঞ); সর্বম্ এব আবিবেশ (সকল বস্তুতে প্রবেশ করেন)।
সরলার্থ: হে সৌম্য, সুষুপ্তিতে জীবাত্মা ও তার ইন্দ্রিয়সমূহ, ইন্দ্রিয়ের বিষয়সকল, এবং উপাদানসমূহ অক্ষর পরমাত্মায় বিশ্রাম গ্রহণ করে। জাগ্রত অবস্থায় কোন ব্যক্তি যদি পরমাত্মার সাথে নিজেকে অভিন্ন বলে উপলব্ধি করেন তখন তিনি নিখিল জগতের সাথে একাত্মতা অনুভব করেন এবং সবকিছুর মধ্যে তিনিই বিরাজ করেন।
ব্যাখ্যা: আমাদের দেহ এবং মনের নানা কার্যকলাপের উৎস হলেন এই পরমাত্মা। বিজ্ঞানাত্ম হল চৈতন্য অর্থাৎ জীবাত্মা। এখানে ‘দেব’ শব্দটির দ্বারা ইন্দ্রিয়কে বোঝানো হয়েছে। ‘দেব’ কথার অর্থ হল যা প্রকাশ করে। আমার চোখ আছে বলেই আমি তোমাকে দেখতে পাই। চোখ দিয়েই আমরা সবকিছুকে দেখে থাকি। একইভাবে, কান আছে বলেই আমরা শুনতে পাই। এখানে ‘প্রাণা’ শব্দটির দ্বারা ইন্দ্রিয়ের অধিপতি দেবতাদের বোঝানো হয়েছে। ‘ভূতানি’ হল উপাদানসমূহ, যেমন— ক্ষিতি, অপ্, তেজঃ, মরুৎ, ব্যোম। আমাদের দেহ এই পাঁচটি উপাদানের সমষ্টি। উপনিষদ বলেন যে, জীবাত্মার এইসব উপাদানগুলি পরমাত্মায় স্থিত। পরমাত্মাই এদেরকে ধারণ করে আছেন। আবার পরমাত্মাই এ সবের বিশ্রাম স্থান।
এই এক ও অভিন্ন পরমাত্মাই আমাদের সকলের মধ্যে আছেন। দেহ, ইন্দ্রিয় ও মনের দ্বারা এই পরমাত্মা নিজেকে আবৃত করে রেখেছেন, কিন্তু তিনি সার্বভৌম। তিনি যেন রাজপ্রাসাদে সভাসদ্ পরিবেষ্টিত সম্রাট। দেহ, ইন্দ্রিয় এবং মন হল আত্মার সভাসদ্বর্গ।
যখন আমি পরমাত্মার সাথে অভিন্নতা উপলব্ধি করতে পারব তখন আমিই ‘সর্বম্’। অর্থাৎ তখন সবকিছুই আমি। কোন জলবিন্দু সমুদ্রে গিয়ে পড়লে জলবিন্দুর যেমন কোন পৃথক অস্তিত্ব থাকে না, সমুদ্রের সাথে মিলেমিশে তা একাকার হয়ে যায়, এও যেন ঠিক তাই। আত্মজ্ঞান লাভ হলে সসীম অসীম হয়ে যায়। জীবাত্মা পরমাত্মায় লীন হয়।
এখানেই প্রশ্ন উপনিষদের চতুর্থ প্রশ্ন সমাপ্ত।