হৃদি হ্যেষ আত্মা। অত্রৈতদেকশতং নাড়ীনাং তাসাং শতং
শতমেকৈকস্যা দ্বাসপ্ততির্দ্বাসপ্ততিঃ প্ৰতিশাখানাড়ীসহস্রাণি
ভবন্ত্যাসু ব্যানশ্চরতি॥৬
অন্বয়: হৃদি হি এষঃ আত্মা (হৃদয়েই আত্মা বাস করেন); অত্র (এই হৃদয়ে); নাড়ীনাম্ এতৎ একশতম্ (একশ এক ধমনী বিদ্যমান); তাসাম্ একৈকস্যাঃ শতং শতম্ (প্রতি ধমনীর একশত শাখা); প্রতিশাখানাড়ী সহস্রাণি দ্বাসপ্ততির্দ্বাসপ্ততিঃ ভবন্তি (প্রতি শাখার বাহাত্তর হাজার উপশাখা আছে); আসু (এরমধ্যে [শাখা প্রশাখায়]); ব্যানঃ চরতি (ব্যান বিচরণ করে)।
সরলার্থ: হৃদয়ই আত্মার আসন। এই হৃদয়ে একশ একটি ধমনী রয়েছে। প্রতিটি ধমনীর একশ শাখা এবং প্রতিটি শাখার বাহাত্তর হাজার উপশাখা। ব্যান এই ধমনী ও তার শাখাপ্রশাখার মধ্য দিয়ে চলাচল করে।
ব্যাখ্যা: হৃদয় শরীরের প্রধানতম অঙ্গ। বেদান্তদর্শনে বলা হয় আত্মার স্থান হৃদয়ে। আচার্য শঙ্কর বলেন, হৃদয়মধ্যস্থ আকাশে (হৃদয়াকাশে) আত্মা রয়েছেন। হৃদয়ের মধ্যে আকাশ আছে। সেই আকাশ অধিকার করে আছেন আত্মা তথা প্রাণ। হৃদয়েই প্রাণের অধিষ্ঠান। প্রাণ বেরিয়ে গেলে তৎক্ষণাৎ হৃৎপিণ্ডের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। হৃদয়ের আকৃতি পদ্মকুঁড়ির মতো বলা হয়। সেইজন্য হৃদয় বোঝাতে ‘হৃদয়পদ্ম’ শব্দটি প্রায়ই ব্যবহার করা হয়।
শিরা, ধমনী ও স্নায়ু বোঝাতে এখানে একটি সাধারণ শব্দ ‘নাড়ী’ ব্যবহার করা হয়েছে। হৃৎপিণ্ড থেকে বহু ধমনী ও শিরা বেরোয়। সেগুলির মধ্যে দিয়ে হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত সমপরিমাণে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। শঙ্করাচার্য এই শিরা ও ধমনীগুলিকে সূর্যকিরণের সাথে তুলনা করেছেন—সূর্য থেকে বেরিয়ে কিরণরাশি যেমন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে, এ-ও ঠিক তেমনি। প্রাণের যে-অংশ শরীরের সর্বত্র সমানভাবে রক্ত ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি করে তাকে বলা হয় ব্যান। উপনিষদ বলেন, হৃদয়ে একশ একটি নাড়ী আছে, প্রতিটি নাড়ীর একশটি শাখা। আবার প্রতি শাখার বাহাত্তর হাজার প্রশাখা। এই সংখ্যা অবশ্য আক্ষরিকভাবে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু প্রতিটি শিরা, ধমনী, স্নায়ু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকেরই একটি নির্দিষ্ট ভূমিকা আছে যদিও তা হয়তো আমাদের কাছে এখনও তত স্পষ্ট নয়।