পায়ূপস্থেঽপানং চক্ষুঃশ্রোত্রে মুখনাসিকাভ্যাং প্রাণঃ স্বয়ং
প্রাতিষ্ঠতে মধ্যে তু সমানঃ এষ হ্যেতদ্ধুতমন্নং সমং নয়তি
তস্মাদেতাঃ সপ্তাৰ্চিষো ভবন্তি॥৫
অন্বয়: পায়ু উপস্থে অপানম্ (প্রাণ গুহ্য ও জননেন্দ্রিয়ের তত্ত্বাবধান করতে অপানকে নিযুক্ত করেন); মুখ-নাসিকাভ্যাং চক্ষুঃ-শ্রোত্রে স্বয়ং প্রাণঃ প্রাতিষ্ঠতে (মুখ, নাক, চোখ এবং কানে প্রাণ নিজে অবস্থান করেন); মধ্যে তু সমানঃ (পাকস্থলীর দেখাশোনা করে সমান); হি (সুতরাং); এষঃ (এই [সমান]); হুতম্ (ভুক্ত, যা খাওয়া হয়েছে); অন্নম্ (খাদ্য); সমং নয়তি (সমভাবে খাদ্যকে সারবস্তুতে [যেমন রক্তে] রূপান্তরিত করে); তস্মাৎ ([প্রাণের অগ্নি] থেকে); এতাঃ সপ্ত (এই সাত [ইন্দ্রিয় যথা দুই চোখ, দুই নাসারন্ধ্র, দুই কান এবং জিভ]); অর্চিষঃ ভবন্তি (অগ্নিশিখার মতো প্রকাশ পায়) [আমাদের সঠিক জ্ঞান দেয়]।
সরলার্থ: এই প্রাণ গুহ্য ও জননেন্দ্রিয়ের তত্ত্বাবধান করতে অপানকে নিযুক্ত করেন। চোখ, কান, মুখ ও নাসারন্ধ্রে প্রাণ নিজে অবস্থান করেন। শরীরের কেন্দ্রীয় অংশের তত্ত্বাবধান করে সমান। সমান খাদ্যকে পরিপাক করে সার পদার্থে পরিণত করে (যেমন রক্তে)। প্রাণের অগ্নি (যা পাকস্থলীর মধ্যে) থেকে সাতটি শিখা নির্গত হয় (যা হল সাতটি ইন্দ্রিয় : যথা দুটি চোখ, দুটি কান, দুটি নাসারন্ধ্র এবং জিভ)।
ব্যাখ্যা: উপনিষদে আগেই বলা হয়েছে প্রাণ নিজেকে পাঁচভাগে ভাগ করেন : যথা প্রাণ, অপান, সমান, ব্যান এবং উদান। এই পাঁচ অংশের পাঁচরকম কাজ। প্রাণ মুখ্য বায়ুরূপে শরীরের প্রধান কাজগুলি যেমন শ্বাসক্রিয়া, শোনা, দেখা ইত্যাদি নিজের দায়িত্বে রাখেন। শরীরের আবর্জনা বের করার জন্য গুহ্য ইন্দ্রিয়ের ভার অপানের উপর ন্যস্ত। জননেন্দ্রিয়ের তত্ত্বাবধানও অপানই করে।
জঠর অর্থাৎ পাকস্থলীর ভিতর রয়েছে ‘সমান’। ‘সমান’ খাদ্য ও পানীয়কে সারা শরীরে সমানভাবে ছড়িয়ে দেয়। জঠরে অগ্নি আছে। আমরা যা কিছু খাদ্য গ্রহণ করি তা জঠরাগ্নিতে পরিপাক হয়। হিন্দুমতে, আহার করা যেন একটি যজ্ঞ যেখানে জঠরাগ্নিতে খাদ্যরূপ আহুতি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই লোভের বশে খায় এবং বেশী খেয়ে ফেলে। যতটা খাদ্য আমরা হজম করতে পারি, ঠিক সেই পরিমাণই আমাদের খাওয়া উচিত।
এই অগ্নির সঙ্গে থাকে সাতটি শিখা (সপ্ত অর্চিষঃ)। এই সাত শিখা হল : দুটি চোখ, দুটি কান, দুটি নাসারন্ধ্র এবং জিভ। অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের দ্বারা আমাদের যে অভিজ্ঞতা হয় জিভ তা কথা দিয়ে প্রকাশ করে। যেখানেই অগ্নি আছে সেখানে এই সাতটি শিখার মধ্য দিয়ে সে নিজেকে প্রকাশ করে। অগ্নি না থাকলে অথবা সেই অগ্নিতে আহুতি না দিলে চোখ দেখতে পায় না, কান শুনতে পায় না, নাক কোন গন্ধ পায় না এবং জিভ কথা বলতে পারে না। এইভাবে ইন্দ্রিয়গুলি ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ে।