দেবানামসি বহ্নিতমঃ পিতৃণাং প্রথমা স্বধা।
ঋষীণাং চরিতং সত্যমথর্বাঙ্গিরসামসি॥৮॥
অন্বয়: দেবানাং বহ্নিতমঃ অসি ([তুমি] দেবতাদের উদ্দেশে প্রদত্ত যজ্ঞীয় আহুতির শ্রেষ্ঠ বাহক); পিতৃনাং প্রথমা স্বধা (পিতৃপুরুষের উদ্দেশে প্রথম নিবেদিত অন্ন); ঋষীণাং চরিতং সত্যম্ (তুমি সেই সত্য যা ঋষিরা পালন করেন); অঙ্গিরসাম্ অথর্বা অসি (অঙ্গিরস ঋষিদের [অর্থাৎ ইন্দ্রিয়গণের] মধ্যে তুমি অথর্বা [প্রাণ]) [অর্থাৎ তুমি ইন্দ্রিয়দের সঠিকভাবে চালনা কর]।
সরলার্থ: হে প্রাণ, দেবতাদের উদ্দেশে যজ্ঞে প্রদত্ত আহুতির তুমি শ্রেষ্ঠ বাহক। শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে পিতৃপুরুষের উদ্দেশে প্রথম নিবেদিত অন্ন তুমিই গ্রহণ কর। ঋষিরা যে সত্য অনুশীলন করেন তাও তুমি। আবার তুমিই ইন্দ্রিয়দের নিজের নিজের কাজে সঠিকভাবে চালনা কর।
ব্যাখ্যা: ‘বহ্নিতমঃ’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ ‘দ্রুততম বাহক’। এটি অগ্নিরই আর এক নাম। কেন অগ্নিকে বাহক বলা হয়? কারণ বৈদিক যাগযজ্ঞে দেবতাদের উদ্দেশে প্রদত্ত আহুতি অগ্নিই দেবতাদের কাছে বহন করে নিয়ে যান। ইন্দ্রিয়রা এখানে বলছে : প্রাণই দেবতা; আবার সেই দেবতার উদ্দেশে প্রদত্ত আহুতিও বহন করে আনে প্রাণ।
‘পিতৃণাং প্রথমা স্বধা’—অর্থাৎ পিতৃপুরুষদের উদ্দেশে প্রথম নিবেদিত অর্ঘ্য। প্রথা অনুযায়ী শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য প্রথম আহুতি দেওয়া হয় পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে। আমরা তাঁদের স্মরণ করলে তাঁরা তুষ্ট হন। এখন ইন্দ্রিয়রা প্রাণকে বলছে : ‘বস্তুত এই প্রথম আহুতি তোমাকেই নিবেদিত। এই অর্ঘ্য তোমারই উদ্দেশে।’
‘ঋষিণাম্’—ঋষি কে? যিনি দেখেছেন। কি দেখেছেন? সত্যকে! যিনি সত্যকে দেখেছেন, সত্যের জ্ঞান লাভ করেছেন তিনিই ঋষি। ঋষিরা আমাদেরও সত্য উপলব্ধি করতে সাহায্য করেন। সেই কারণে আমরা তাঁদের কাছে ঋণী। তাঁরা আমাদের আচার্য।
এখানে ইন্দ্রিয়দের ঋষি বলা হয়েছে, কারণ আমরা ইন্দ্রিয়দের মাধ্যমেই দেখি। সত্য উপলব্ধি করতে হলে ইন্দ্রিয়ের সহায়তা প্রয়োজন। তারাই আমাদের কাছে সত্যকে প্রকাশ করে। ইন্দ্রিয়সহায়ে আমরা বুঝতে পারি জগতে যা কিছু আছে সবই ঈশ্বর। বাস্তবিক, এছাড়া জীবন আর কিসের জন্য? আমরা বেঁচে আছি কেন? এই জীবনের গুরুত্ব এই যে, সত্যকে, ঈশ্বরকে জানার জন্য জীবন অপরিহার্য। মানবজন্ম লাভ করে আমরা ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে নানা অভিজ্ঞতা লাভ করি। আর তখনই বুঝতে পারি আমরা যা কিছু দেখছি সব ঈশ্বরেরই ভিন্ন ভিন্ন রূপ। সুতরাং ইন্দ্রিয়রা প্রাণকে বলছে: ‘তুমিই সেই প্রাণশক্তি যা ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে কাজ করে। তুমি ইন্দ্রিয়দের সঠিকভাবে চালিত করছ যাতে সত্যকে জানা যায়। শাস্ত্রে আছে তুমিই সেই অথর্বা যাকে অঙ্গিরা প্রমুখ ঋষিরা উপাসনা করে থাকেন।’