প্রজাপতিশ্চরসি গর্ভে ত্বমেব প্রতিজায়সে।
তুভ্যং প্রাণ প্রজাস্ত্বিমা বলিং হরন্তি
যঃ প্রাণৈঃ প্রতিতিষ্ঠসি॥৭
অন্বয়: ত্বম্ এব প্রজাপতিঃ গর্ভে চরসি (তুমিই প্রজাপতি এবং এইরূপে তুমি [মাতৃ] গর্ভে নড়েচড়ে বেড়াও); প্ৰতিজায়সে (তোমার মা-বাবার প্রতিরূপ হয়ে [অর্থাৎ মা-বাবার মতো চেহারা নিয়ে] জন্মগ্রহণ কর); প্রাণ (হে প্রাণ); যঃ (যে তুমি); প্রাণৈঃ (চোখ এবং অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে); প্রতিতিষ্ঠসি (প্রতি শরীরে বাস কর); তুভ্যং তু (তোমার জন্য); ইমাঃ প্রজাঃ (এই প্রাণিসমূহ); বলিং হরন্তি (ভোগ্যবস্তু আহরণ করে)।
সরলার্থ: তুমি প্রজাপতিরূপে মাতৃগর্ভে নড়েচড়ে বেড়াও। তুমি তোমার মা-বাবার মতো চেহারা নিয়ে জন্মগ্রহণ কর। হে প্রাণ, তুমি সব শরীরে ইন্দ্রিয়দের প্রধান হয়ে রয়েছ। মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীরা ইন্দ্রিয়ের দ্বারা (ভোগ্যবস্তু গ্রহণ করে) তোমাকে উপহার দেয় (তাদের পক্ষে এটাই সঠিক কাজ)।
ব্যাখ্যা: ‘প্রজাপতি’ শব্দের অর্থ সবকিছুর (প্রজাদের) প্রভু (পতি); ব্রহ্মার আর এক নাম প্রজাপতি। প্রাণের প্রশস্তি করে ইন্দ্রিয়রা বলছেন, ‘তুমি প্রজাপতি এবং তুমিই মাতৃগর্ভে নড়েচড়ে বেড়াও (প্রজাপতি চরসি গর্ভে)।’
‘ত্বম্ এব প্রতিজায়সে’—তোমার মা-বাবার অনুরূপ চেহারা নিয়ে তুমি জন্মগ্রহণ কর। শঙ্করাচার্য বলেন, ‘হে প্রাণ, যেহেতু তুমি প্রজাপতি, সব দেহে সব প্রজন্মে সেই এক তুমিই রয়েছ। তোমার চেহারা তোমার মা-বাবার অনুরূপ, আবার তোমার মা-বাবাও তোমার অনুরূপ। এ ঘটনা আগে থেকেই ঠিক হয়ে আছে কারণ সেই এক তুমিই বারবার আসা-যাওয়া করছ।’
‘তুভ্যং প্রাণ প্রজাঃ ইমাঃ বলিং হরন্তি’—ইন্দ্ৰিযরা তোমার জন্য উপহার নিয়ে আসে। ‘বলি’ শব্দের অর্থ উপহার। এই উপহার দেবতার প্রতি প্রীতি ও শ্রদ্ধার নিদর্শন। আমরা যখন কিছু দেখি, আমাদের চোখ কিছু অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করে। কিন্তু তা সে নিজের জন্য করে না, প্রাণকে জানিয়ে দেয়। একইভাবে, অন্যান্য ইন্দ্রিয়রাও তাদের অভিজ্ঞতা প্রাণকে উপহার দেয়। ‘যঃ প্রাণৈঃ প্রতিতিষ্ঠসি’ অর্থাৎ এই ইন্দ্রিয়গুলি প্রাণের উপর নির্ভরশীল। ‘তারা তোমাকেই আশ্রয় করে আছে। তাই তোমার প্রশস্তি গাইছে। এটাই তাদের পক্ষে উপযুক্ত কাজ।’