অরা ইব রথনাভৌ প্রাণে সর্বং প্রতিষ্ঠিতম্।
ঋচো যজূংষি সামানি যজ্ঞঃ ক্ষত্রং ব্রহ্ম চ॥৬
অন্বয়: অরাঃ ইব রথনাভৌ (যেখানে রথচক্রে শলাকাগুলি চক্রের কেন্দ্রে নিবদ্ধ); প্রাণে ([সেইরকম] প্রাণে); সর্বম্ (এই [জগতে] সবকিছু); প্রতিষ্ঠিতম্ (দৃঢ়ভাবে স্থাপিত); ঋচঃ যজূংষি সামানি (তিন বেদ—ঋক্, যজুঃ এবং সাম); যজ্ঞঃ (বৈদিক যজ্ঞানুষ্ঠান); ক্ষত্রম্ (ক্ষত্রিয় [দ্বিতীয় বর্ণাশ্রম]); ব্রহ্ম চ (এবং ব্রাহ্মণ [প্রাণকে আশ্রয় করে আছেন])।
সরলার্থ: অন্যান্য বস্তু তো বটেই এমনকি ঋক্, যজুঃ এবং সাম বেদ, বৈদিক যাগযজ্ঞ, ক্ষত্রিয়, ব্রাহ্মণ সকলেই প্রাণকে আশ্রয় করে আছেন। রথচক্রে শলাকাগুলি যেমন চক্রের কেন্দ্রকে আশ্রয় করে থাকে, এও ঠিক তেমনি।
ব্যাখ্যা: প্রাণকে এখানে রথচক্রের নাভি বা কেন্দ্রের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। চাকার কেন্দ্রবিন্দু এবং বাইরের বৃত্তের মাঝে থাকে অনেকগুলি শলাকা। এই নাভি বা কেন্দ্র ছাড়া কোন শলাকা বা চাকা থাকা সম্ভব নয়। ইন্দ্রিয়রা প্রাণকে বলছেন, ‘এই বিশ্ব, এই জগৎ এক বিশাল চাকার মতো এবং আমরা তার শলাকা। সেই চাকার কেন্দ্রকে আমরা সবাই আশ্রয় করে আছি। সেই কেন্দ্র তুমি। আর শুধু আমাদের কেন, সবকিছুকেই তুমি ধারণ করে আছ।’ সবকিছু প্রাণেই প্রতিষ্ঠিত (প্রাণে সর্বং প্রতিষ্ঠিত)।
‘ঋচঃ যজূংষি সামানি’—ঋগ্ বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ। বেদই জ্ঞান। কে এই জ্ঞানকে ধারণ করে আছেন? প্রাণ। এখানে ‘যজ্ঞ’ শব্দটিকে ব্যাপক অর্থে ধরা যেতে পারে। যজ্ঞ বলতে শুধুমাত্র বৈদিক যাগযজ্ঞ বোঝায় না। আমরা যা কিছু করি তা-ই একরকমের যজ্ঞ। আমাদের কোন কিছুই ধর্মকে বাদ দিয়ে নয়। আমরা যা কিছু করি তা প্রাণ আছে বলেই সম্ভব হয়। ‘ক্ষত্রং ব্রহ্ম চ’—যে বর্ণাশ্রমেরই হই না কেন আমরা প্রত্যেকেই প্রাণের উপর নির্ভরশীল, কেউ স্বাধীন নই। ব্রাহ্মণ পরাবিদ্যা এবং বৈদিক ক্রিয়াকর্মের সংরক্ষণ করেন, কিন্তু তিনিও স্বাধীন নন। আবার ক্ষত্রিয় ব্রাহ্মণ এবং অন্যান্য বর্ণের মানুষকে রক্ষা করেন। সমস্ত সমাজ ক্ষত্রিয়ের উপর নির্ভর করে অথচ ক্ষত্রিয় স্বয়ং প্রাণের উপর নির্ভরশীল। শঙ্করাচার্য বলেন—আমরা যা কিছু দেখি, যা কিছুর অস্তিত্ব আছে সব প্রাণের প্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নয়।