ব্রাত্যস্ত্বং প্রাণৈকর্ষিরত্তা বিশ্বস্য সৎপতিঃ।
বয়মাদ্যস্য দাতারঃ পিতা ত্বং মাতরিশ্ব নঃ॥১১
অন্বয়: প্রাণ (হে প্রাণ); ত্বং ব্রাত্যঃ (তুমি পতিত [যেহেতু তুমিই প্রথম পুরুষ, তোমাকে পৈতে দেওয়ার কেউ ছিল না]); একৰ্ষিঃ (একর্ষি নামক অগ্নি); অত্তা (যজ্ঞের হবি বা ঘি যে গ্রহণ করে); বিশ্বস্য সৎপতিঃ ([এবং] জগতের পরম পতি); বয়ম্ (আমরা [ইন্দ্রিয়সমূহ]); আদ্যস্য (প্রথমে যার জন্ম হয়েছে অর্থাৎ তোমার); দাতারঃ ([তুমি যে হবি গ্রহণ কর] আমরা তার দাতা); মাতরিশ্ব ত্বং নঃ পিতা (হে মাতরিশ্বা, তুমি আমাদের পিতা [অথবা, ত্বং মাতরিশ্বনঃ পিতা, তুমি মাতরিশ্বা অর্থাৎ বায়ুরও পিতা])।
সরলার্থ: হে প্রাণ, তুমি ব্রাত্য, অশুদ্ধ (কারণ তোমার উপনয়ন হয়নি)। তথাপি তুমিই সেই একর্ষি নামক অগ্নি এবং (যজ্ঞে প্রদত্ত) হবির ভোক্তা। তুমি জগতের পরমপতি। তুমিই প্রথম জন্মগ্রহণ করেছ। আমরা ইন্দ্রিয়রা তোমার প্রয়োজনীয় খাদ্য তোমাকে দিই। হে মাতরিশ্বা, তুমি আমাদের পিতা (অথবা তুমি মাতরিশ্বা অর্থাৎ বায়ুর পিতা)।
ব্যাখ্যা: ধরা যাক ব্রাহ্মণ বংশে কোন বালকের জন্ম হয়েছে। নির্দিষ্ট বয়সে তার উপনয়ন হওয়ার কথা। কিন্তু কোন কারণে যদি তাকে উপনয়ন দ্বারা সংস্কার না করা হয় তাহলে সে হবে ব্রাত্য। ‘ব্রাত্য’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ পতিত। আবার কেউ যদি তাঁর নির্দিষ্ট কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হন তাহলে তাঁকেও ‘ব্রাত্য’ বলা হবে। কিন্তু এখানে তো ইন্দ্রিয়রা প্রাণের প্রশস্তি করছিল। তাহলে কেন ‘ব্রাত্য’ কথাটা ব্যবহার করা হল? কারণ প্রাণ যেহেতু প্রথম সত্তা তাঁর উপনয়ন অনুষ্ঠান করার মতো দ্বিতীয় কেউ ছিল না। সুতরাং তাঁর উপবীত নেই, তাই তিনি ‘ব্রাত্য’। কিন্তু স্বভাবত প্রাণ চিরপবিত্র, উপবীত থাকুক বা নাই থাকুক।
‘বিশ্বস্য সৎপতিঃ’—তুমি এই জগতের একমাত্র পতি। তুমিই প্রথম প্রকাশ। তোমার থেকে আমরা সবাই এসেছি। আমরা উপাসনা করলে তোমারই উপাসনা করি। যজ্ঞে আহুতি দিলে সে আহুতি বস্তুত তোমাকেই দিই। যা কিছু আমরা করি সব তোমারই উদ্দেশে নিবেদিত।
‘পিতা ত্বং মাতরিশ্ব নঃ’—হে মাতরিশ্বা, তুমি আমাদের পিতা। বায়ুকে মাতরিশ্বা বলা হয়। ইন্দ্রিয়রা প্রাণকে বায়ুর সঙ্গে তুলনা করছে কারণ বাতাস ছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না। তাই ইন্দ্রিয়রা বলছে, ‘আমরা সবাই তোমার সন্তান, তোমার উপরে নির্ভর করে আছি।’