যো বা এতামেবং বেদ অপহত্য পাপ্মানমনন্তে
স্বর্গেলোকে জ্যেয়ে প্রতিতিষ্ঠতি প্রতিতিষ্ঠতি॥৯
অন্বয়: যঃ বৈ এতাম্ এবং বেদ (যিনি তাঁকে [অর্থাৎ ব্রহ্মকে] এইভাবে জানেন); পাপ্মানম্ অপহত্য (সব পাপ অতিক্রম করে [অর্থাৎ অজ্ঞানতা জয় করে]); অনন্তে জ্যেয়ে স্বর্গে লোকে (শ্রেষ্ঠ অনন্ত দিব্যধামে [অর্থাৎ অনন্ত আনন্দে); প্রতিতিষ্ঠতি (দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হন)।
সরলার্থ: যিনি ব্রহ্মকে এইভারে জানেন, তিনি সব অজ্ঞানতা অতিক্রম করে অসীম আনন্দে নিত্য প্রতিষ্ঠিত হন।
ব্যাখ্যা: এইভাবে যিনি ব্রহ্মকে জানেন অর্থাৎ, এই উপনিষদ যেভাবে ব্রহ্মকে ব্যাখ্যা করলেন সেইভাবে যিনি ব্রহ্মকে জানেন—তিনি আত্মজ্ঞান লাভ করেন। সব অজ্ঞানতার ঊর্ধ্বে উঠে তখন তিনি জন্মমৃত্যুর চক্র থেকে মুক্ত হয়ে যান। এখন আমরা সকলেই এই জন্মমৃত্যুর চক্রে বাঁধা। আমরা জন্মাই, সময় হলে মারা যাই, আবার জন্মাই। জন্ম এবং মৃত্যু অনিবার্যভাবে একটার পর আরেকটা আসে আর যায়। কিন্তু যখন আমাদের স্বরূপজ্ঞান হয়, যখন আমরা আমাদের আত্মাকে জানতে পারি, যখন বুঝি আমরা কে—তখনই আমরা মোক্ষ বা মুক্তি লাভ করি। অজ্ঞানতাবশত এখন আমরা ইন্দ্রিয়জ অভিজ্ঞতার সঙ্গে নিজেদের অভিন্ন বলে মনে করি, আর সেইজন্যেই অশেষ দুঃখভোগ করি। কিন্তু যখন জানবো যে আমরা দেহ নই, ইন্দ্রিয়াদি নই, যখন জানবো যে আমরা ইন্দ্রিয়াদি তথা সবকিছুর পারে, তখন আর আমাদের এ জগতে ফিরে আসতে হবে না। জন্মমৃত্যু চক্র চূর্ণ করে তখন আমরা মুক্ত হয়ে যাই। ‘স্বর্গ’ বলতে সাধারণত আমরা যা বুঝি এই শ্লোকে ‘স্বর্গ’ বলতে তা বোঝাচ্ছে না। আমরা যাকে স্বর্গ বলি তা অনিত্য। কিন্তু এখানে স্বর্গ বলতে অবিমিশ্র, নিত্য আনন্দ এবং সুখের একটা অবস্থা বোঝানো হয়েছে, যে অবস্থা ব্রহ্মের সঙ্গে একাত্ম বোধ করলেই লাভ করা সম্ভব। এই সর্বোচ্চ অবস্থা লাভ করাই মনুষ্যজীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
কেন উপনিষদের চতুর্থ খণ্ড এইখানে সমাপ্ত।