যৎ প্রাণেন ন প্রাণিতি যেন প্রাণঃ প্ৰণীয়তে।
তদেব ব্রহ্ম ত্বং বিদ্ধি নেদং যদিদমুপাসতে॥৯
অন্বয়: যৎ (যাঁকে অর্থাৎ ব্রহ্মকে); প্রাণেন (শ্বাসের দ্বারা, ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের সাহায্যে); ন প্রাণিতি (কেউ আঘ্রাণ করতে পারে না); যেন (যাঁর দ্বারা); প্রাণঃ (শ্বাসবায়ু, ঘ্রাণেন্দ্রিয়); প্রণীয়তে (শ্বাস নেয়, আঘ্রাণ করে [অর্থাৎ কাজ করে])।
সরলার্থ: একমাত্র তাঁকেই ব্রহ্ম বলে জেনো যিনি ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের গোচর নন, অথচ যাঁর শক্তিতে ঘ্রাণেন্দ্রিয় ঘ্রাণ নেয়, কাজ করে। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য এবং সর্বজনপূজ্য জগৎ থেকে এই ব্রহ্ম স্বতন্ত্র।
ব্যাখ্যা: যে শ্লোকগুলি এতক্ষণ পড়া হল তার মর্মার্থ এই যে ব্রহ্ম ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য কোন বস্তু নন। ব্রহ্মের সাহায্য ছাড়া ইন্দ্রিয়গুলি তাদের নিজের নিজের কাজ করতে পারে না। ব্রহ্মই সব শক্তির উৎস। ব্রহ্মই পরম সত্তা বা তত্ত্ব যাঁর উপর সবকিছু অধ্যস্ত, অর্থাৎ নির্ভরশীল। এখন আমাদের এটাই অনুভব করতে হবে যে, এই ব্রহ্মই আমাদের সকলের আত্মা।
ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য এই স্থূলজগৎ নিয়ে আমরা এমনই মত্ত যে, এটা যে সত্য নয় একথা আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারি না। জগৎ সত্য নয়, একথার অর্থ হল এই যে, জগৎ পরিবর্তনশীল। বেদান্তমতে, যা কিছু পরিবর্তনশীল তা-ই মিথ্যা, অর্থাৎ ‘অনিত্য’। একমাত্র ব্রহ্মই সত্য বা ‘নিত্য’ কারণ ব্রহ্ম অপরিবর্তনীয়। এই জগৎ যে সত্য বলে মনে হয় তার একমাত্র কারণ এই জগৎ ব্রহ্মে আশ্রিত। ব্রহ্মকে বাদ দিলে এই জগতের কোন অস্তিত্ব থাকে না।
কেন উপনিষদের প্রথম খণ্ড এইখানে সমাপ্ত।