অন্যদেব তদ্বিদিতাদথো অবিদিতাদধি।
ইতি শুশ্রুম পূর্বেষাং যে নস্তদ্ব্যাচচক্ষিরে॥৪
অম্বয়: অন্যদেব তদ্বিদিতাদথো [অন্যৎ এব, তৎ বিদিতাৎ অথো] (সব পরিচিত অথবা জানা জিনিস থেকে আলাদা); অবিদিতাদধি [অবিদিতাৎ অধি] ([এমনকি) অজানা বস্তুসমূহেরও অতীত); ইতি শুশ্রুম (এই আমরা শুনেছি); পূর্বেষাম্ (প্রাচীন আচার্যদের কাছ থেকে); যে (যাঁরা); নঃ (আমাদের কাছে); তৎ (সেই [ব্রহ্ম]); ব্যাচচক্ষিরে (ব্যাখ্যা করেছিলেন)।
সরলার্থ: সব পরিচিত ও জ্ঞাত বস্তু থেকে ‘তৎ’ অর্থাৎ সেই ব্রহ্ম স্বতন্ত্র; ব্রহ্ম অজ্ঞাত বস্তু থেকেও স্বতন্ত্র। প্রাচীন (আচার্য) যাঁরা এই তত্ত্বের ব্যাখ্যাতা—আমরা তাঁদের কাছ থেকে একথা শুনেছি।
ব্যাখ্যা: এ জগতে এমন কিছু বস্তু আছে যাদের সম্বন্ধে আমরা কিছু কিছু জানি, আবার এমন সব বস্তুও আছে যাদের সম্বন্ধে আমরা সম্পূর্ণ অজ্ঞ। কিন্তু ব্রহ্মজ্ঞানের কোন তুলনা হয় না। তিনি জ্ঞান-অজ্ঞানের পার। জ্ঞাত এবং অজ্ঞাত দুই শ্রেণীর বস্তুরই ঊর্ধ্বে তিনি। ব্রহ্মজ্ঞান মানে আত্মজ্ঞান, নিজের স্বরূপকে জানা। অনেক বই পড়ে এই জ্ঞান লাভ করা যায় না; এ অঙ্ক শেখা নয় যে, শিক্ষক বুঝিয়ে দিলেন আর ছাত্র অমনি বুঝে গেল। ব্রহ্মজ্ঞান এমনই জ্ঞান যা পরম্পরাগতভাবে গুরু থেকে শিষ্যে আসে। বলা হয়, এ যেন একটি প্রদীপ থেকে আরেকটি প্রদীপ জ্বালানো। এই জ্ঞান সাধকের অন্তরে হঠাৎই একদিন দপ করে জ্বলে ওঠে। কেমন করে যে এটা সম্ভব হয় তা বুঝিয়ে বলা যায় না। এই জ্ঞান তাই অনির্বচনীয়। আপনি হয়তো খুবই বুদ্ধিমান, অগাধ পাণ্ডিত্য আপনার। কিন্তু তা সত্ত্বেও যে আপনি ব্রহ্মকে বুঝে ফেলবেন তা নয়। তাই উপনিষদ বলছেন, আগে নিজেকে তৈরী করো। জমি তৈরী হলে যথাসময়ে গুরু তোমাকে এই জ্ঞান দেবেন। তিনিই তোমাকে তোমার প্রকৃত পরিচয় বলে দেবেন। এসব সত্ত্বেও এই উপনিষদ বলছেন যে, ব্রহ্ম অজ্ঞেয়। তাঁকে আমরা জানতে পারি না, কারণ তিনিই আমাদের আত্মা। প্রথমে জমি তৈরী করে ঐ জ্ঞান ধারণের উপযুক্ত হতে হবে। তারপর হঠাৎ একদিন ঐ জ্ঞান আপনিই এসে উপস্থিত হবে এবং তখন তুমি তোমার প্রকৃত স্বরূপ উপলব্ধি করতে পারবে।