বায়ুরনিলমমৃতমথেদং ভস্মান্তং শরীরম্।
ওঁ ক্ৰতো স্মর কৃতং স্মর ক্রতো স্মর কৃতং স্মর॥১৭
অগ্নে নয় সুপথা রায়ে অস্মান্
বিশ্বানি দেব বয়ুনানি বিদ্বান্।
যুযোধ্যস্মজ্জুহুরাণমেনো
ভূয়িষ্ঠাং তে নম-উক্তিং বিধেম॥১৮
অন্বয়: [আমার মৃত্যু আসন্ন] অথ (সেই হেতু); বায়ুঃ ([আমার] প্ৰাণবায়ু); অমৃতম্ অনিলম্ (মহাবায়ুতে মিলিত হোক); ইদং শরীরম্ (আমার এই স্থূল শরীর); ভস্মান্তম্ (ভস্মীভূত হোক); ওম্ (ব্রহ্মকে স্মরণ করা হচ্ছে); ক্রতো (হে আমার মন); স্মর ([স্মরণীয়কে] স্মরণ কর); কৃতং স্মর (জীবনে যা কিছু করেছ তা স্মরণ কর); ক্ৰতো স্মর কৃতং স্মর (পুনঃ পুনঃ স্মরণার্থে)। অগ্নে (হে অগ্নি); রায়ে (শুভ কর্মফল লাভের উদ্দেশ্যে); অস্মান্ সুপথা (আমাদেরকে সুপথে); নয় (নিয়ে যাও); বিশ্বানি বয়ুনানি (সকল কর্ম এবং চিত্তবৃত্তি); বিদ্বান্ ([আপনি] জানেন); অস্মৎ (আমাদের কাছ থেকে); জুহুরাণম্ এনঃ (সকল অশুভ কর্মের ফল); যুযোধি (দূর করুন); তে (আপনাকে); ভূয়িষ্ঠাম্ (বার বার); নমঃ নমস্কার); উক্তিম্ (বচন); বিধেম (উচ্চারণ করি)।
সরলার্থ: এখন সেই মৃত্যু আসন্নপ্রায়। আমার প্রার্থনা যেন আমার প্রাণবায়ু বিশ্বপ্রাণে বিলীন হয়। যেন আমার দেহ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। হে মন, সারা জীবনে তুমি যা কিছু করেছ তা চিন্তা কর। নিজের কৃতকর্ম স্মরণ কর।
হে অগ্নি, যা র্হিতকর তা লাভের জন্য অনুগ্রহ করে আমাদের সুপথে চালিত কর। হে দেব, আমাদের সব কৃতকর্ম এবং চিন্তা তুমি জান। আমাদের মধ্যে যা কিছু অশুভ, অনুগ্রহ করে তা দূর কর। আমরা তোমাকে বারবার প্রণাম করি।
ব্যাখ্যা (Verse 17): মৃত্যু আসন্ন হলে অনেক চিন্তা আমাদের মনে এসে ভিড় করে। আমরা সারা জীবন যেভাবে কাটিয়েছি সেই অনুরূপ চিন্তাই আমাদের মনে জাগে। আমাদের সেই সময় বিশেষ ভাবে চেষ্টা করা উচিত যাতে কেবল শুভ চিন্তাই আমরা করতে পারি। আমরা যা চিন্তা করি তাই হয়ে যাই। আমাদের চিন্তাই আমাদের সৃষ্টি করে। এই কারণেই বারবার চেষ্টা করতে হয় যাতে মন শুধু ভাল চিন্তাই করে। আর এইজন্যই আত্মীয়-পরিজনও মৃত্যুর সময়ে বিশেষ প্রার্থনা করে থাকেন।
ব্যাখ্যা (Verse 18): অগ্নির কাছে আমাদের এই প্রার্থনা, যাতে তিনি আমাদের ব্রহ্মের দিকে চালিত করেন। মৃত্যুকালে স্থূল শরীর আগুনে পুড়ে যায়, কিন্তু সূক্ষ্ম শরীর থাকে। সূক্ষ্ম শরীর সতেরটি অংশের সমষ্টি পাঁচটি প্রাণবায়ু, পাঁচটি জ্ঞানেন্দ্রিয়, পাঁচটি কর্মেন্দ্রিয়, মন এবং বুদ্ধি। এইসবই জড় কিন্তু অতি সূক্ষ্মরূপে থাকে। আমাদের সব কর্ম এবং চিন্তার ছাপ মনে থেকে যায়।
মৃত্যুকালে জীবাত্মা স্থূলদেহ ত্যাগ করে, কিন্তু সূক্ষ্ম শরীরে থাকে। যার যেমন কর্মফল সেই অনুযায়ী আত্মা পিতৃলোকে বা দেবলোকে যায়। সেখানে সে কতকাল থাকবে তাও আমাদের কর্মের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তারপরে আত্মা পুনরায় এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে, কেননা তখনও তার বাসনার নিবৃত্তি হয়নি।
এইভাবে জন্মমৃত্যুর মধ্যে আত্মার আসা যাওয়া চলতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না সে এই যাতায়াতের অসারতা বুঝতে পারে। তখন মানুষ ত্যাগের পথ অনুসরণ করে। একমাত্র ত্যাগের পথেই মানুষের মুক্তি। তখন জীবাত্মা পরমাত্মায় বিলীন হয়ে যান।
ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে।
পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে॥
ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ॥