তে তমৰ্চয়ন্তস্ত্বং হি নঃ পিতা যোঽস্মাকমবিদ্যায়াঃ পরং পারং
তারয়সীতি। নমঃ পরমঋষিভ্যো নমঃ পরমঋষিভ্যঃ॥৮
অন্বয়: তে (ঐ শিষ্যেরা); তম্ অৰ্চয়ন্তঃ (তাঁকে অর্চনা করতে আরম্ভ করলেন); ত্বং হি নঃ পিতা ([তাঁরা বললেন] আপনিই আমাদের পিতা); যঃ ([কারণ আপনি) যিনি); অস্মাকম্ (আমাদের); অবিদ্যায়াঃ পরং পারম্ (অবিদ্যার পরপারে); তারয়সি (নিয়ে গেলেন); নমঃ পরম-ঋষিভ্যঃ (আমরা মহান ঋষিদের প্রণাম করি); নমঃ পুরম-ঋষিভ্যঃ ([পুনরায়] আমরা মহান ঋষিদের প্রণাম করি)।
সরলার্থ: শিষ্যরা গুরুর প্রতি তাঁদের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করলেন। তাঁরা বললেন : ‘আপনি আমাদের পিতা, কারণ আপনিই আমাদের অজ্ঞানতার পরপারে নিয়ে গেছেন। আমরা সেই মহান ঋষিদের বারবার প্রণাম করি।’
ব্যাখ্যা: শিষ্যরা এখন সবকিছু জেনেছেন। তাই তাঁরা গুরুর প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। আত্মজ্ঞানই সর্বোচ্চ দান। অর্থদানও দান। কিন্তু অর্থ তো চিরস্থায়ী নয়। আবার শিক্ষাদানও যথেষ্ট নয়। কারণ শিক্ষার সাহায্যেও সব সমস্যার সমাধান হয় না। আধ্যাত্মিক জ্ঞানই সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞান। তাই অত্যন্ত কৃতজ্ঞতার সাথে শিষ্যরা গুরুকে তাঁদের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করছেন।
‘ত্বং হি নঃ পিতা’—আপনিই আমাদের পিতা। পিতা যেমন ধনসম্পদ তাঁর সন্তানদের দিয়ে যান ঠিক তেমনি আপনি আমাদের এই সর্বোচ্চ জ্ঞান দান করেছেন।
আমরা গুরুকে পিতা বলি কেন? শঙ্করাচার্য বলেন : যিনি তোমাকে এই শরীর দিয়েছেন তিনিই তোমার পিতা। এই কারণে তিনি পূজনীয়। আমরা তাঁর প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। আমরা তাঁকে ভালবাসি এবং শ্রদ্ধা করি। কিন্তু যিনি আমাকে মুক্তির পথ দেখান, যিনি আমাকে অভয়ধামে পৌঁছে দেন তাঁকে আমরা কোন্ স্থান দেব? তিনি কি আমাদের পিতা নন?
‘অস্মাকম্ অবিদ্যায়াঃ পরং পারং তারয়সি’—তিনি আমাদের অজ্ঞান নদীর পরপারে নিয়ে যান। প্রায় সবধর্মেই এই নদীর ধারণা দেখতে পাওয়া যায়। এই সেই নদী যার পরপারে আমাকে যেতে হবে। কিন্তু কিভাবে অপর পারে যাব আমি তা জানি না। এই নদীটি কি? এ অজ্ঞানতার নদী। কে আমাদের এই নদীর অপর পারে পৌঁছে দেবেন? গুরু, তিনিই তো আমাদের কর্ণধার।
‘নমঃ পরমঋষিভ্যঃ’—এবার আমরা সকল গুরুপরম্পরাকে প্রণাম করি, যাঁরা এই জ্ঞান—আত্মজ্ঞান বা পরমজ্ঞান আমাদের দান করেছেন। কিন্তু এখানে ‘নমঃ পরমঋষিভ্যঃ’ কথাটি দুবার বলা হয়েছে কেন? গুরুর প্রতি ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য।
এখানেই প্রশ্ন উপনিষদের ষষ্ঠ প্রশ্ন সমাপ্ত।