অরা ইব রথনাভৌ কলা যস্মিন্ প্রতিষ্ঠিতাঃ। তং বেদ্যং পুরুষং বেদ
যথা মা বো মৃত্যুঃ পরিব্যথা ইতি॥৬
অন্বয়: রথনাভৌ (রথচক্রের নাভিতে) [কেন্দ্রবিন্দু]; অরাঃ ইব (শলাকার মতো); যস্মিন্ (যে পুরুষে); কলাঃ প্রতিষ্ঠিতাঃ (গুণসকল [যেমন প্রাণ ইত্যাদি] আরোপিত); তং বেদ্যং পুরুষম্ (সেই পুরুষকে [সেই পরমাত্মাকে] জানতে হবে); বেদ (তাঁকে জান); যথা (যাতে); মৃত্যুঃ বঃ মা পরিব্যথাঃ ইতি (মৃত্যু তোমাদের ব্যথা দিতে না পারে)।
সরলার্থ: রথনাভিতে (রথচক্রের কেন্দ্রবিন্দুতে) রথচক্রের শলাকাগুলি প্রতিষ্ঠিত। একইভাবে জীবাত্মার উপাধিসকলও পুরুষের (পরমাত্মার) ওপর আশ্রিত। সেই পুরুষকে জানতে চেষ্টা কর। তাঁকে জানতে পারলে মৃত্যু আর তোমাকে স্পর্শ করতে পারবে না।
ব্যাখ্যা: উপনিষদ এখানে আর একটি দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন। চক্রের মধ্যে শলাকা থাকে। সেই শলাকাগুলি একটি কেন্দ্রবিন্দু অর্থাৎ রথচক্রের নাভি থেকেই এসেছে এবং নাভির ওপরেই আশ্রিত। এখানে কলা বা উপাধিসকলকে রথচক্রের শলাকার সাথে এবং ব্রহ্মকে রথচক্রের কেন্দ্রবিন্দুর (নাভি) সাথে তুলনা করা হয়েছে। এমন কোন একটা আশ্রয় বা অধিষ্ঠানের প্রয়োজন যার ওপর এই জগৎ স্থিত। আর সেই আশ্রয়ই হলেন ব্রহ্ম। রথচক্রের শলাকাগুলি যেমন তার নাভির ওপর আশ্রিত ঠিক তেমনি এ জগৎ ব্রহ্মে স্থিত।
‘তং বেদ্যং পুরুষং বেদ’—‘তুমিই সেই পুরুষ, তুমিই আত্মা’—একথা আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। ‘আমি নিত্য, শুদ্ধ, বুদ্ধ, মুক্ত আত্মা’—এই জ্ঞান অর্জন করতে পারলে মৃত্যুভয় আর আমাদের স্পর্শ করতে পারে না। আমরা তখন উপলব্ধি করি, ‘আমি পূর্ণ, আমিই পৃথিবীর সবকিছু হয়েছি’ এবং ‘আমি অমর’।