তিস্রো মাত্রা মৃত্যুমত্যঃ প্রযুক্তা অন্যোন্যসক্তা অনবিপ্রযুক্তাঃ।
ক্ৰিয়াসু বাহ্যাভ্যন্তরমধ্যমাসু সম্যক্ প্রযুক্তাসু ন কম্পতে জ্ঞঃ॥৬
অন্বয়: তিস্রঃ মাত্রাঃ (‘অউম্’-এর তিনটি অক্ষর); প্রযুক্তাঃ (পৃথকভাবে); মৃত্যুমত্যঃ (মৃত্যুর অধীন); অন্যোন্যসক্তাঃ (যদি তারা পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত হয়); অনবিপ্রযুক্তাঃ (সঠিক কাজ); বাহ্যাভ্যন্তরমধ্যমাসু ক্ৰিয়াসু (বাহ্য, অভ্যন্তর, এবং মধ্যম অর্থাৎ জাগ্রত, স্বপ্ন ও সুষুপ্তি অবস্থার অধিষ্ঠাত্রী দেবতার ধ্যান করে); সম্যক্ প্রযুক্তাসু (সঠিকভাবে); জ্ঞঃ ন কম্পতে (যিনি পরমাত্মাকে জানেন তিনি কখনও বিচলিত হন না)।
সরলার্থ: যিনি ‘অউম্’-এর তিনটি অক্ষরকে আলাদাভাবে ধ্যান করেন তিনি মৃত্যুর অধীন। কিন্তু এই তিনটি অক্ষরকে একত্রে ধ্যান করতে পারলে সেই ধ্যানই যথার্থ। জাগ্রত, স্বপ্ন ও সুষুপ্তি এই তিন অবস্থার অধিষ্ঠাত্রী দেবতা আলাদা নন, এক। যিনি সঠিকভাবে এই দেবতার ধ্যান করেন তিনিই ‘অউম্’-এর প্রকৃত অর্থ জানতে পারেন। যিনি এই ‘অউম্’কে ঠিক ঠিক ভাবে জানেন তিনি অভয়পদ লাভ করেন।
ব্যাখ্যা: আমরা সকলেই এই তিন অবস্থার অধীন—বাহ্য অর্থাৎ জাগ্রত অবস্থা, অভ্যন্তর বা সুষুপ্তি অবস্থা এবং মধ্য বা স্বপ্নাবস্থা। উপনিষদ বলেন, যিনি ওম্কে এই তিন অবস্থার সাথে যুক্ত করে ধ্যান করেন তিনি নিখিল বিশ্বের সাথে একাত্মতা অনুভব করেন। সাধক যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন সব অবস্থাতেই তিনি ব্রহ্মের সাথে অভিন্নতা বোধ করেন। এর ফলে তিনি নিজেকে কখনও অপরের থেকে আলাদা বলে মনে করেন না। এবং তিনি সবরকম ভয় থেকে মুক্ত। ভয় করার মতো কে-ই বা তাঁর আছে? তখন থাকে শুধুই প্রেম।
আচার্য শঙ্কর বলছেন, যিনি ‘ওম্’কে এইভাবে জেনেছেন তিনি আত্মজ্ঞান লাভ করেছেন। ‘ন কম্পমান’—তাঁর আর বিপথে পা পড়ে না। ‘কুতো বা চলেৎ’—কোথায়ই বা যাবেন তিনি? তিনি কি নিজের থেকে দূরে যেতে পারেন? তিনিই সর্বত্র রয়েছেন।