অথ যদি দ্বিমাত্রেণ মনসি সম্পদ্যতে সোঽন্তরিক্ষং যজুৰ্ভিরুন্নীয়তে
সোমলোকম্। স সোমলোকে বিভূতিমনুভূয় পুনরাবর্ততে॥৪
অন্বয়: অথ যদি (কিন্তু যদি); সঃ (তিনি); দ্বিমাত্রেণ (অউম-এর দ্বিতীয় অক্ষরকে অর্থাৎ উ-কে [ধ্যান করেন]); মনসি সম্পদ্যতে (মনকে সমৃদ্ধ করেন); যজুৰ্ভিঃ (যজুর্বেদের দ্বারা); অন্তরিক্ষং সোমলোকম্ উন্নীয়তে (অন্তরিক্ষের মধ্য দিয়ে তিনি চন্দ্রলোকে যান); সঃ সোমলোকে বিভূতিম্ অনুভূয় (তিনি সেই লোকের সমস্ত উত্তম বস্তু উপভোগ করেন); পুনঃ আবর্ততে (তখন তিনি আবার এই পৃথিবীতে ফিরে আসেন)।
সরলার্থ: সাধক যদি ‘অউম্’-এর দ্বিতীয় অক্ষরের (‘উ’কার) ধ্যান করেন, তবে এর দ্বারা তিনি মনকে উন্নত করেন (অর্থাৎ সাধক এই অক্ষরটির সাথে একাত্মতা অনুভব করেন)। মৃত্যুর পর এই বর্ণই (‘উ’কার) সাধককে অন্তরীক্ষের মধ্য দিয়ে চন্দ্রলোকে নিয়ে যায়। অন্তরীক্ষ হল স্বর্গ এবং মর্তের মধ্যবর্তী আকাশ। ‘অউম্’-এর দ্বিতীয় বর্ণ ‘উ’ যজুর্বেদের প্রতীক। সাধক চন্দ্রলোকের সমস্ত ঐশ্বর্য ভোগ করে পুনরায় মানুষ রূপে এই মর্তলোকে ফিরে আসেন।
ব্যাখ্যা: ধরা যাক, সাধক ‘উ’কারের ধ্যানে মগ্ন হয়ে আছেন। ‘উ’কার-এর দ্বারা ভুবঃ বা স্বর্গ এবং মর্তের মধ্যবর্তী স্থান এবং স্বপ্নের জগৎকে বোঝানো হয়েছে। উপনিষদ বলেন যে, ‘উ’কারের ধ্যান করার ফলে সাধক মৃত্যুর পর চন্দ্রলোকে যান। যে জগতে আমরা এখন বাস করি তার তুলনায় চন্দ্রলোক সূক্ষ্ম ও উন্নততর।
‘অউম্’-এর দ্বিতীয় বর্ণ উ, যজুর্বেদের প্রতীক। যখন আমরা ‘উ’কারের ধ্যান করি তখন আমরা যজুর্বেদের প্রভাব অনুভব করে থাকি। আমরা তখন আর এই পার্থিব ভোগসুখের প্রতি আসক্ত হই না। বরং আমরা তখন পরহিতকর কর্ম যেমন কূপখনন, বৃক্ষরোপণ, রাস্তাঘাট নির্মাণ ইত্যাদি কাজে আনন্দ পাই। এইসব কাজ করার ফলেই আমরা চন্দ্রলোক প্রাপ্ত হই। যজুর্বেদের প্রতীক ‘উ’ বর্ণটি যেন আমাদেরকে অন্তরীক্ষের মধ্য দিয়ে (স্বর্গ ও মর্তের মধ্যবর্তী আকাশ) চন্দ্রলোকে নিয়ে যায়। এই লোকে আমরা নানা পার্থিবসুখ ভোগ করে থাকি এবং সুখে জীবনযাপন করি। আমরা দেবদেবীর সান্নিধ্য ও পূর্বপুরুষদের সঙ্গ লাভ করে থাকি। কিন্তু এই লোকে আমরা কতদিন থাকব, আমাদের কর্মই তা স্থির করে দেয়। সময় ফুরিয়ে গেলে এই পৃথিবীতে আমরা মানুষ রূপে জন্মগ্রহণ করে পুনরায় ফিরে আসি।