যদুছ্বাসনিঃশ্বাসাবেতাবাহুতী সমং নয়তীতি স সমানঃ। মনো হ বাব
যজমানঃ। ইষ্টফলমেবোদানঃ। স এনং যজমানমহরহর্ব্রহ্ম গময়তি॥৪
অন্বয়: যৎ (যেহেতু); এতৌ উচ্ছ্বাস নিঃশ্বাসৌ (এই প্রশ্বাস নিঃশ্বাস); আহুতি (দুটি আহুতি); সমং নয়তি (সমানভাগে বণ্টন করে); ইতি (এই কারণে); সঃ সমানঃ (সেই সমানই [হোতা]); মনঃ হ বাব যজমানঃ (মনই সেই ব্যক্তি যার জন্য যজ্ঞ করা হয়); উদানঃ এব ইষ্টফলম্ (এই যজ্ঞের ফল হল উদান); [সেইজন্য] সঃ (সেই [এই উদান]); এনং যজমানম্ (এই মনরূপ যজমানকে); অহরহঃ (প্রতিদিন [শ্বাসহীন গভীর নিদ্রায়; সুষুপ্তিতে]); ব্রহ্ম গময়তি (ব্রহ্মের কাছে নিয়ে যায়)।
সরলার্থ: সমান হল হোতা বা পুরোহিত। অগ্নিহোত্র যজ্ঞে হোতা যেমন আহুতিকে দুটি সমান ভাগে দান করেন ঠিক সেরকম আমাদের শরীরের সামঞ্জস্য রক্ষার্থে সমানবায়ুও নিঃশ্বাস এবং প্রশ্বাসকে সমপরিমাণে ভাগ করে। মন সেই ব্যক্তি যার জন্য যজ্ঞ করা হয়। উদান অভীষ্ট ফল, কারণ সুষুপ্তি অবস্থায় উদানই মনকে ব্রহ্মের কাছে নিয়ে যায়।
ব্যাখ্যা: এখানে উপনিষদ বলছেন, সমানবায়ু যেন অগ্নিহোত্র যজ্ঞের হোতা বা পুরোহিত। সমান নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়াকে দেখাশোনা করে। এই নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসকে অগ্নিহোত্র যজ্ঞে পুরোহিত যে দুটি আহুতি দান করেন তার সাথে তুলনা করা হয়। অগ্নিহোত্র যজ্ঞে পুরোহিত সমানভাবে আহুতি দুটি দান করেন। অনুরূপভাবে, শরীরের সামঞ্জস্য রক্ষা করার জন্য সমানবায়ু নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্যে সমতা বজায় রাখে।
যিনি আত্মজ্ঞান লাভ করেছেন তাঁর আর অগ্নিহোত্র যজ্ঞ করার দরকার হয় না। তাঁর শরীরে আপনা আপনিই এই যজ্ঞ চলতে থাকে। এরকম ব্যক্তি কিন্তু অলস নন। এমনকি ঘুমের মধ্যেও তিনি কাজ করে চলেন। মনই তাঁর যজমান (অর্থাৎ যার জন্য যজ্ঞ করা হয়) এবং তা সবসময়ই সক্রিয়। মানুষ স্বর্গলাভের আশায় এই অগ্নিহোত্র যজ্ঞ করে থাকেন। কিন্তু আবার এমন মানুষও আছেন যাঁরা স্বর্গলাভে ইচ্ছুক নন, আত্মজ্ঞান লাভ করাই তাঁদের জীবনের লক্ষ্য। ইন্দ্রিয় এবং ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়সমূহ তাঁদের মনের অধীন। মন এমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলেই তাকে ‘যজমান’ বলা হয়।
এই যাগযজ্ঞ ঠিক ঠিকভাবে সম্পন্ন হলে উদানবায়ু কার্যকরী হয়ে ওঠে। উদানবায়ুকে যজ্ঞের যে ফল তার সঙ্গে তুলনা করা হয়। উদানবায়ুই মন ও ইন্দ্রিয়কে ব্রহ্মের কাছে নিয়ে যায়। এই অবস্থাকে বলা হয় সুষুপ্তি। যজমানের পক্ষে এ স্বর্গলাভের সামিল।