তস্মৈ স হোবাচ। যথা গার্গ্য মরীচয়োঽর্কস্যান্তং গচ্ছতঃ সর্বা
এতস্মিংস্তেজোমণ্ডল একীভবন্তি। তাঃ পুনঃ পুনরুদয়তঃ প্ৰচরন্ত্যেবং হ
বৈ তৎ সর্বং পরে দেবে মনস্যেকীভবতি। তেন তর্হ্যেষ পুরুষো ন
শৃণোতি ন পশ্যতি ন জিঘ্রতি ন রসয়তে ন স্পৃশতে নাভিবদতে নাদত্তে
নানন্দয়তে ন বিসৃজতে নেয়ায়তে স্বপিতীত্যাচক্ষতে॥২
অন্বয়: তস্মৈ সঃ হ উবাচ (তিনি তাঁকে বললেন); গার্গ্য (হে গার্গ্য); যথা অস্তং গচ্ছতঃ অর্কস্য (সূর্য যখন অস্ত যায়); সর্বাঃ মরীচয়ঃ (সমস্ত রশ্মি); এতস্মিন্ তেজোমণ্ডলে একীভবন্তি (এই জ্যোতির্মণ্ডলে এক হয়ে যায়); পুনঃ উদয়তঃ (পুনরায় যখন সূর্য উদিত হয়); তাঃ (সেই কিরণরাশি); পুনঃ প্রচরন্তি (পুনরায় বিকীর্ণ হয়); এবং হ বৈ (একই ভাবে); তৎ সর্বম্ (সব ইন্দ্রিয়); পরে দেবে মনসি (শ্রেষ্ঠ ইন্দ্রিয়ে, মনে); একীভবতি (এক হয়ে যায়); তেন (সেই কারণে); তর্হি (সেই মুহূর্তে); এষঃ পুরুষঃ (এই পুরুষ); ন শৃণোতি (শোনে না); ন পশ্যতি (দেখে না); ন জিঘ্ৰতি (ঘ্রাণ নেয় না); ন রসয়তে (আস্বাদন করে না); ন স্পৃশতে (স্পর্শ করে না); ন অভিবদতে (অভিবাদন করে না); ন আদত্তে (গ্রহণ করে না); ন আনন্দয়তে (ইন্দ্রিয়সুখ ভোগ করে না); ন বিসৃজতে (মলমূত্র ত্যাগ করে না); ন ইয়ায়তে (কোথাও গমন করে না); স্বপিতি ([শুধু] নিদ্রা যায়); ইতি আচক্ষতে (তার সম্পর্কে লোকে এই কথা বলে)।
সরলার্থ: পিপ্পলাদ তখন তাঁকে বললেন: হে গার্গ্য, সূর্যাস্তের সময় সূর্যের রশ্মিসকল সূর্যেই ফিরে যায়। কিন্তু সূর্যোদয়ে সেই রশ্মিগুলি পুনরায় চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সেইরূপ সুষুপ্তি অবস্থায় ইন্দ্রিয়সকল তাদের দেবতা মন, তাতে ফিরে যায় এবং মনের সঙ্গে এক হয়ে যায়। তখন ইন্দ্রিয়সকল কোন কাজ করে না। এর ফলে সুষুপ্তি অবস্থায় মানুষ (স্থূলদেহ) শোনে না, দেখে না, ঘ্রাণ নেয় না, স্বাদ গ্রহণ করে না, স্পর্শ করে না, কথা বলে না, কোন কিছু গ্রহণ করে না, ইন্দ্রিয়সুখ ভোগ করে না, মলমূত্র ত্যাগ করে না, চলাফেরাও করে না। অন্যেরা তখন তার সম্পর্কে বলে থাকে, ‘সে ঘুমিয়ে আছে’।
ব্যাখ্যা: উপনিষদ বলেন, দিনের বেলা সূর্যের কিরণ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সূর্য যখন অস্ত যায় তখন সেই কিরণরাশিই আবার সূর্যে ফিরে আসে। একইভাবে, আমরা যখন রাত্রিতে ঘুমাই তখন ইন্দ্রিয়সকল মনে ফিরে যায় (পরে দেবে মনসি একীভবতি)। ইন্দ্রিয়গুলি তখন মনে লীন হয়ে যায়। সেই অবস্থায় চোখ দেখে না, কান শোনে না, জিভ স্বাদ গ্রহণ করে না। অর্থাৎ ইন্দ্রিয়সকল তখন কোন কাজ করে না, তারা তখন তাদের সমস্ত কার্যকলাপ মনের কাছে সমর্পণ করে।
এখানে মনকে ‘দেব’ বলা হয়েছে। অর্থাৎ যা আলো দান করে, যা প্রকাশ করে। ‘পর’ অর্থ শ্রেষ্ঠ। মনই সকল ইন্দ্রিয়ের নেতা। অর্থাৎ মনই সব ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণ করে।