উৎপত্তিমায়তিং স্থানং বিভুত্বং চৈব পঞ্চধা। অধ্যাত্মং চৈব
প্রাণস্য বিজ্ঞায়ামৃতমশ্নুতে বিজ্ঞায়ামৃতমশ্নুত ইতি॥১২
অন্বয়: প্রাণস্য উৎপত্তিম্ (প্রাণের উৎপত্তি); আয়তিম্ (শরীরে আসে অর্থাৎ শরীর ধারণ করে); স্থানম্ (শরীরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান); পঞ্চধা বিভুত্বং চ এব (পাঁচটি অংশের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করে); অধ্যাত্মং চ এব (শরীরের ভিতরে [যেমন চোখে] এবং বাইরে [যেমন সূর্যরূপে]); বিজ্ঞায় অমৃতম্ অশ্নুতে (প্রাণকে এভাবে জেনে তুমি অমৃতত্ব লাভ কর) [শেষ কথাটি বার বার বলা হয়েছে বিষয়টির উপর গুরুত্ব দেবার জন্য এবং অধ্যায়ের সমাপ্তি বোঝাবার জন্য]।
সরলার্থ: প্রাণ পরমাত্মা থেকে আসে। তারপর বাসনা পূরণের জন্য উপযুক্ত শরীর গ্রহণ করে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে নিজেকে স্থাপন করে। প্রাণের প্রতিটি অংশের জন্য আবার পৃথক পৃথক কাজ ভাগ করা থাকে। বাইরের প্রাণই সূর্য; আবার শরীরের মধ্যে চোখই প্রাণ। প্রাণ ও তার কার্যকলাপ বুঝতে পারলে মানুষ অমর হয় (কারণ তখন সে জানে সে-ই স্বয়ং প্রাণ)।
ব্যাখ্যা: প্রাণের (সমষ্টি শক্তি) উৎপত্তি আত্মা থেকে। বস্তুত প্রাণ আত্মারই বিকার। মনে বাসনা থাকলে প্রাণ শরীর গ্রহণ করে। শরীরে সে নিজেকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করে (প্রাণ, অপান, ব্যান, উদান, সমান)। প্রতিটি ভাগকে শরীরের একটি বিশেষ অংশ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। যেমন অপান পায়ু (বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনের অঙ্গ) এবং উপস্থের (জননেন্দ্রিয়) ভারপ্রাপ্ত। প্রাণ স্বয়ং চোখ ও কানকে নিয়ন্ত্রণ করে। সমানের উপর থাকে শরীরের মধ্যভাগের দায়িত্ব। ব্যান ধমনীসমূহকে ও উদান সুষুম্না নাড়ীকে নিয়ন্ত্রণ করে। মৃত্যুকালে প্রাণ উদানের সাহায্যেই দেহ ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
শরীরের বাইরে প্রাণ সূর্যরূপে প্রকাশিত। আর দেহের ভিতরে চক্ষুরূপে। বস্তুত প্রাণ শরীরের ভিতরের ও বাইরের সমস্ত উপাদান যথা ক্ষিতি, তেজ, বায়ু ইত্যাদিকে নিয়ন্ত্রণ করে। প্রাণকে জানলে মানুষ প্রাণের সঙ্গে অভিন্ন বোধ করে। সেই অবস্থায় সে জন্ম-মৃত্যুর পারে চলে যায়, অর্থাৎ অমর হয়।
এখানেই প্রশ্ন উপনিষদের তৃতীয় প্রশ্ন সমাপ্ত।