এষোঽগ্নিস্তপত্যেষ সূর্য
এষ পর্জন্যো মঘবানেষ বায়ুঃ।
এষ পৃথিবী রয়ির্দেবঃ
সদসচ্চামৃতং চ যৎ॥৫
অন্বয়: এষঃ (এই [প্রাণ]); অগ্নিঃ (অগ্নি রূপে); তপতি (তাপ দেন); এষঃ (এই প্রাণ); সূর্যঃ (সূর্য [অর্থাৎ সূর্যরূপে আলো দেন]); এষঃ (এই প্রাণ); পর্জন্যঃ (মেঘ [অর্থাৎ মেঘরূপে বৃষ্টি দেন]); এষঃ মঘবান্ (এই প্রাণ ইন্দ্ররূপে সব কিছু পালন করেন [ইন্দ্র হলেন দেবরাজ]); এষঃ বায়ুঃ (এই প্রাণ বায়ু [অর্থাৎ বায়ু রূপে সর্বত্র বিদ্যমান]); এষঃ দেবঃ (ইনি প্রকাশ করেন); পৃথিবী (পৃথিবী); রয়িঃ (চন্দ্র); সৎ (স্থূলকাৰ্য); অসৎ (সূক্ষ্মকারণ); চ অমৃতম্ (এবং অমর); চ [অপি] যৎ (এই সবই প্রাণ)।
সরলার্থ: এই প্রাণই অগ্নি এবং অগ্নিরূপে ইনি তাপ দেন। সূর্য, মেঘ, ইন্দ্র, বায়ু, পৃথিবী এবং চন্দ্র [যাঁদের তিনি প্রকাশও করেন] সবই এই প্রাণ। সংক্ষেপে বলতে গেলে [কার্যরূপে] তিনিই স্থূল এবং [কারণরূপে] তিনিই সূক্ষ্ম। আবার তিনি অমরও বটে। এই সবই প্রাণ।
ব্যাখ্যা: বিস্ময়কর যা কিছু আমরা দেখি সবই প্রাণের প্রকাশ। প্রাণই বাইরের অগ্নি, আবার দেহের উত্তাপ অর্থাৎ ভেতরের অগ্নিও প্রাণ। মানুষ মারা গেলে তার শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। সুতরাং দেহের উত্তাপ জীবনের লক্ষণ। প্রাণই এই উত্তাপ।
সূর্যরূপে প্রাণ আমাদের তাপ ও আলো দেন; আর মেঘরূপে দেন বৃষ্টি। ইন্দ্র হয়ে তিনি দেবতাদের রাজা এবং বায়ুরূপে প্রাণ সর্বত্র রয়েছেন। যে পৃথিবী আমাদের আশ্রয়, আমাদের পালন করছেন তাও এই প্রাণ।
প্রাণই রয়ি অর্থাৎ চন্দ্র। চন্দ্র এখানে অন্নের প্রতীক। একদিক থেকে প্রাণই জীবন বা ভোক্তা অর্থাৎ যে খাদ্য গ্রহণ করে। আর এক দিক থেকে আমরা যে খাদ্য খাই তাও প্রাণ। বেঁচে থাকার জন্য মানুষের খাদ্য প্রয়োজন। আবার মারা গেলে মানুষই অন্য জীবের খাদ্য হতে পারে। এই ধারা চক্রাকারে চলছে। আসলে সবই এক। একই বস্তু বিভিন্ন ভূমিকা পালন করছে।
‘সৎ’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ ‘যার অস্তিত্ব আছে’। কিন্তু এখানে যা স্থূল, যা দেখা যায় তা বোঝাতেই ‘সৎ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। সৎ-ই কার্য। ‘অসৎ’ অর্থ যা দেখা যায় না। অসৎ-ই কারণ। সৎ-অসৎ, স্থূল-সূক্ষ্ম, কার্য-কারণ—উভয়ই প্রাণ। প্রাণকে অমৃত [অর্থাৎ অমরত্বের যে সুধা দেবদেবীদের ধারণ করে আছে] বলা হয়েছে। প্রাণ সকল মানুষ এবং সকল দেবদেবীর আশ্রয়।