তান্ বরিষ্ঠঃ প্রাণ উবাচ। মা মোহমাপদ্যথ অহমেবৈতৎ পঞ্চধাঽঽত্মানং
প্রবিভজ্যৈতদ্বাণমবষ্টভ্য বিধারয়ামীতি তেঽশ্রদ্দধানা বভূবুঃ॥৩
অন্বয়: বরিষ্ঠঃ প্রাণঃ (প্রাণ, যিনি প্রধান); তান্ উবাচ (ইন্দ্রিয়সমূহকে বললেন); মোহং মা আপদ্যথ ([তোমরাই দেহকে ধারণ করে আছ এই চিন্তা করে] ভুল করো না); অহম্ এব এতৎ (আমিই একাজ করি [অর্থাৎ আমি দেহকে ধারণ করি, তোমরা নও]); আত্মানং পঞ্চধা (আমি আমার পাঁচটি শক্তি [প্রাণ, অপান, ব্যান, উদান এবং সমান] প্ৰয়োগ করি); প্রবিভজ্য (যার যা কাজ তাকে তা ভাগ করে দিয়ে); এতৎ বাণম্ অবষ্টভ্য বিধারয়ামি (দেহের যত্ন নিয়ে আমি তাকে ধারণ করি); তে ([কিন্তু] তাঁরা [ইন্দ্রিয়সমূহ]); অশ্রদ্ধধানাঃ বভূবুঃ ([প্রধান ইন্দ্রিয় প্রাণকে] বিশ্বাস করতে পারলেন না)।
সরলার্থ: প্রাণ, যিনি প্রধান, ইন্দ্রিয়সমূহকে বললেন : ‘এভাবে অহঙ্কার করো না। আমি নিজেকে পাঁচটি বিভিন্ন শক্তিতে ভাগ করেছি এবং দেহকে সচল রাখতে তাদের নিয়োগ করেছি। দেহের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমি দায়ী।’ ইন্দ্রিয়সমূহ সেকথায় কর্ণপাত করলেন না।
ব্যাখ্যা: এবার প্রাণ প্রতিবাদ জানালেন : ‘মা মোহম্ আপদ্যথ’—‘সাবধান, মোহগ্রস্ত হয়ো না’। আমরা প্রত্যেকেই সময়ে সময়ে এ ধরনের ভুল করে থাকি। নিজেদের সম্বন্ধে যা নয় তাই ভেবে বসি। ফলত নিজেদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। এই হল মোহ।
কাজেই প্রাণ তাঁদের সতর্ক করে দিয়ে বললেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই নিজেকে ঠকাচ্ছ, নির্বোধের মতো কথা বলছ। নিজেকে পাঁচ ভাগে ভাগ করে কেবলমাত্র আমিই এই দেহ ধারণ করে আছি।’ এই পাঁচটি ভাগ কি কি? এরা হল—প্রাণ, অপান, ব্যান, উদান ও সমান। প্রাণের কাজ শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করা এবং অপানের কাজ খাদ্যের অসার পদার্থ বর্জন করা। ব্যান দেহের সকল স্নায়ুতে ছড়িয়ে রয়েছে। আবার উদান দেহের তাপ রক্ষা করে এবং সমান খাদ্য হজম ও পরিপাকে সাহায্য করে। এই পাঁচটি শক্তির দ্বারা প্রাণ আমাদের শরীরকে সচল রাখে, কাজ করার শক্তি যোগায়।
প্রাণের এসব কথা ইন্দ্রিয়দের উপর কোন প্রভাব ফেলল না। অহঙ্কারবশত তাঁরা প্রাণের কথা মেনে নিতে পারলেন না।