তেষামসৌ বিরজো ব্রহ্মলোকো ন যেষু জিহ্মমনৃতং ন মায়া চেতি॥১৬
অন্বয়: যেষু (যাঁদের মধ্যে); জিহ্মম্ (কুটিলতা); অনৃতম্ (মিথ্যাচার, সততার অভাব); [চ] ন (অনুপস্থিত); মায়া চ ন (কপটতাও নেই); তেষাম্ (শুধু তাঁদেরই); অসৌ বিরজঃ ব্রহ্মলোকঃ (এই শুদ্ধ ব্রহ্মলোক)।
সরলার্থ: যাঁদের মধ্যে মিথ্যাচার, কুটিলতা বা কপটতার লেশমাত্র নেই তাঁরাই শুধু ব্রহ্মলোকে স্থান পাওয়ার যোগ্য।
ব্যাখ্যা: আমরা বলতে পারি আমরা ব্রহ্মলোক লাভ করতে চাই। কিন্তু তখনই প্রশ্ন জাগে, আমরা কি রকম জীবন যাপন করছি?
উপনিষদ বলেন, সেই পরমকে লাভ করতে হলে একান্ত প্রয়োজন পবিত্রতা। রজঃ শব্দের অর্থ মলিনতা, কালিমা। ‘বিরজ’ অর্থ শুদ্ধ বা নির্মল। তারপর প্রয়োজন ঋজুতা অর্থাৎ সরলতার। আমার মধ্যে কোন কুটিলতা থাকবে না (ন জিহ্মম্), থাকবে না কোন মিথ্যাচারও। ‘ঋতম্’ অর্থ ‘সত্য’। ‘অনৃতম্’ অর্থ ‘মিথ্যা’। হিন্দুশাস্ত্রমতে সত্যের চেয়ে বড় ধর্ম আর নেই।
আমরা হয়তো লক্ষ্য করেছি যে, এখানে বিশেষ কোন আচার-অনুষ্ঠান পালন বা কোন বিশেষ দেবতার উপাসনার কথা বলা হয়নি। কোন প্রার্থনা বা মন্ত্রোচ্চারণের নির্দেশও দেওয়া হয়নি। কেবলমাত্র পবিত্র, সৎ এবং সরল হতে বলা হয়েছে। এইজন্যই স্বামী বিবেকানন্দ বলতেন—ধর্ম হল ‘হওয়া এবং হয়ে ওঠা’। মানুষকে শুদ্ধ ও নির্মল হয়ে উঠতে হবে।
যে প্রশ্ন দিয়ে আমরা আরম্ভ করেছিলাম তা হল, ‘এই সকল প্রাণী কোথা থেকে আসে?’ উত্তর হল—প্রজাপতি থেকে। প্রজাপতিই বহু হয়েছেন। জগতে কত রকম বস্তু রয়েছে। সব মূলত এক। কিন্তু তাদের দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়—কারণ এবং কার্য, প্রাণ এবং রয়ি, জীবন এবং জীবনধারণ, অন্ন এবং তার ভোক্তা।
জীবনের সূচনা প্রজাপতি (প্রাণ) থেকে এবং রয়ির (খাদ্য) দ্বারা তা পুষ্ট। যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ কৃচ্ছ্রসাধন, আত্মসংযম এবং সত্যপালনের দ্বারা পিতৃলোক (চন্দ্রলোক) প্রাপ্ত না হচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত এই ধারা চলতে থাকে। কিন্তু পিতৃলোকও যাত্রার শেষ নয়। অর্থাৎ তখনও মুক্তিলাভ হয়নি। মুক্তিলাভের জন্য তাকে ভিক্ষু (সন্ন্যাসী) হতে হবে—কেননা একমাত্র সন্ন্যাসীরই মিথ্যা বা ছলনার আশ্রয় নেবার প্রয়োজন হয় না। তিনি নির্মল জীবন যাপন করেন। প্রাণের (প্রজাপতির) সঙ্গে তিনি একাত্ম হয়ে যান।
এখানেই প্রশ্ন উপনিষদের প্রথম প্রশ্ন সমাপ্ত।