পঞ্চপাদং পিতরং দ্বাদশাকৃতিং
দিব আহুঃ পরে অর্ষে পুরীষিণম্।
অথেমে অন্য উ পরে বিচক্ষণং
সপ্তচক্রে ষড়র আহুরর্পিতমিতি॥১১
অন্বয়: [যাঁরা ত্রিকালকে জানেন তাঁরা আদিত্যের বর্ণনায় বলেছেন যে তাঁর] পঞ্চপাদম্ (পাঁচটি পা [ঋতু]); দ্বাদশাকৃতিম্ (বারটি আকৃতি [বার মাস]); দিবঃ পরে অর্ধে (স্বর্গ ও মর্তের মধ্যবর্তী স্থানের ঊর্ধ্বে [অবস্থিত]); পুরীষিণম্ (জল বর্ষণ করে); পিতরম্ আহুঃ ([তাঁরা] তাঁকে পিতা বলেন [কারণ তিনি জগতের স্রষ্টা]); অথ উ (অপরপক্ষে); অন্যে ইমে পরে (অন্যরা [পণ্ডিতেরা বলেন]); বিচক্ষণম্ (সর্বজ্ঞ [আদিত্য যিনি রথ চালনা করেন]); সপ্তচক্রে (সপ্তচক্রবিশিষ্ট রথ); ষড়রে ([প্রতি চক্রে] ছয়টি শলাকা সহ); অর্পিতম্ ইতি আহুঃ (এই জগৎ প্রতিষ্ঠিত বলা হয়)।
সরলার্থ: পণ্ডিতেরা বলেন, আদিত্যের পাঁচটি ঋতু এবং বারটি মাস আছে। তিনি সকলের পিতা, স্বর্গে থাকেন এবং তিনিই বৃষ্টির কারণ। আরেক দল পণ্ডিতের মতে, সেই আদিত্য সর্বজ্ঞ এবং তিনি একটি সপ্তচক্রবিশিষ্ট রথ চালনা করেন। সেই চক্রের প্রতিটি আবার ছয়টি শলাকার সঙ্গে সংযুক্ত। এই আদিত্যেই সমগ্র জগৎ প্রতিষ্ঠিত।
ব্যাখ্যা: সূর্যের উদ্দেশে উপনিষদ ঋগ্বেদ থেকে আর একটি প্রশস্তি মন্ত্র উচ্চারণ করেছেন। এই মন্ত্রে রূপকের সাহায্যে আদিত্যকে বর্ণনা করা হয়েছে। আদিত্য এই জগৎ সৃষ্টি করেছেন, জগৎকে ধারণ করে আছেন। ‘পঞ্চপাদম্’—এর আক্ষরিক অর্থ পাঁচটি পা। এখানে পাঁচ ঋতু বোঝানো হয়েছে। ভারতবর্ষে সাধারণত ছয়টি ঋতুর কথা বলা হয়। কিন্তু এই শ্লোকে হেমন্ত, শিশির অর্থাৎ শরতের শেষভাগ যা স্বল্পকাল স্থায়ী এবং শীতকে একত্র করে একটি ঋতু ধরা হয়েছে। ‘দ্বাদশাকৃতিম্’ অর্থ বছরের বারটি মাস।
‘দিবঃ’ অর্থ স্বর্গ এবং মর্তের মধ্যবর্তী আকাশ, তারও উপরে ‘দিবঃ পরে অর্ধে’, অর্থাৎ যেখানে সূর্য জলকে আকর্ষণ করে নেয়। জল একবার উপরে স্বর্গলোক পর্যন্ত যায়, আবার বৃষ্টি হয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে। মনে হয় যেন সূর্য থেকেই বর্ষণ হচ্ছে।
‘সপ্তচক্র’ অর্থ সাতটি চাকা। কখনও কখনও সূর্যকে দেবতারূপে কল্পনা করা হয়; সপ্তচক্রবিশিষ্ট রথে তিনি বসে আছেন। সাতটি চাকার তাৎপর্য হল আলোর সাতটি রঙ। ‘ষড়র’ কথাটির অর্থ চাকার ছয়টি শলাকা যা ছয়টি ঋতুর প্রতীক। এখানে ছয়টি ঋতুকে স্বীকার করা হয়েছে। ‘অর্পিতম্’—এই সবকিছু সূর্যে প্রতিষ্ঠিত।
প্রশ্ন হল, আমরা যে সময়ের কথা বলি সেই ‘সময়’ বলতে আমরা কি বুঝি? একটি বছর, একটি মাস, একটি ঋতু, দিন ও রাত্রি সকলেরই সম্বন্ধ সূর্যের সঙ্গে। আমাদের সময়বোধ সূর্য থেকেই আসে। কিন্তু সময়ের এইসব বিভাগের উৎস একই—তিনি প্রজাপতি।