স পর্যগাচ্ছুক্রমকায়মব্রণ-
মস্নাবিরং শুদ্ধমপাপবিদ্ধম্।
কবিৰ্মনীষী পরিভূঃ স্বয়ম্ভু-
র্যাথাতথ্যতোঽর্থান্ব্যদধাচ্ছাশ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ॥৮
অন্বয়: সঃ পর্যগাৎ (তিনি [অর্থাৎ পরমাত্মা] সর্বব্যাপী); শুক্রম্ (শুভ্র, উজ্জ্বল); অকায়ম্ (রূপহীন); অব্রণম্, (সম্পূর্ণ, অর্থাৎ অক্ষত); অস্নাবিরম্ (শিরাহীন) [অর্থাৎ দেহহীন]; শুদ্ধম্ (পবিত্র); অপাপবিদ্ধম্ (দোষরহিত [অর্থাৎ অজ্ঞানতার লেশমাত্র নেই]); কবিঃ (প্রাজ্ঞ); মনীষী (সর্বজ্ঞ, মনের নিয়ন্তা); পরিভূঃ (উত্তম বা শ্রেষ্ঠ অর্থাৎ সকলের উপরে তাঁর স্থান); স্বয়ম্ভূঃ (স্বত বিদ্যমান; তিনি সৃষ্ট নন, নিজের ইচ্ছাতেই নিজেকে প্রকাশ করেন); শাশ্বতীভ্যঃ (চিরন্তন); সমাভ্যঃ (কাল ব্যাপী); অর্থান্ (কর্মের ফলসমূহকে); যাথাতথ্যতঃ (যথাযথরূপে); ব্যদধাৎ (বিধান করেন)।
সরলার্থ: তিনি (আত্মা) সর্বব্যাপী, জ্যোতির্ময়, নিরবয়ব, অক্ষত, অচ্যুত, নির্মল, সর্বজ্ঞ, নিজ মনের নিয়ন্তা, সর্বোত্তম, স্বয়ম্ভূ এবং চিরন্তন। তিনি প্রত্যেকের জন্য যথাকর্তব্য বিধান করেন।
ব্যাখ্যা: আমরা কিভাবে শান্তিলাভ করব সেকথাই এখানে আলোচনা করা হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের মধ্যে দুই বোধ থাকে, ততক্ষণ আমার শত্রু ও মিত্র দুই-ই থাকতে পারে। আমি যেন সেই মনের অধিকারী হতে পারি, যে মন আকাশের মতো উদার এবং সমগ্র পৃথিবীকে নিজের বলে গ্রহণ করে। সেই মন শুদ্ধ, উজ্জ্বল, উদার, মুক্ত এবং সর্বগ্রাহী। এ অবস্থা আমরা তখনই লাভ করতে পারব যখন আমরা উপলব্ধি করব যে, আমিই সকলের মধ্যে রয়েছি।
অদ্বৈতবাদীদের বিশ্বাস, এটিই আত্মার প্রকৃত স্বরূপ। যদি আত্মাকে অন্যরকম বলে মনে হয় তবে তা আরোপিত গুণের জন্য। সেটা কিন্তু আত্মার স্বরূপ নয়। আত্মা সাক্ষী মাত্র। এই দৃশ্যমান জগতের কোন কিছুর সঙ্গেই আত্মা যুক্ত নন। অথচ তাঁরই প্রভাবে এই জগতের সব কিছু ঘটে চলেছে। এ যেন প্রদীপের মতো। প্রদীপ আলো দেয়। আলো ছাড়া ভাল বা খারাপ কিছুই দেখা যায় না। কিন্তু সেই আলোতে ভাল বা মন্দ যে কাজই করি না কেন, তাতে প্রদীপটির কিছু যায় আসে না। আত্মার সঙ্গে দৃশ্যজগতের সম্পর্কও ঠিক সেরকম।