অসুর্যা নাম তে লোকা
অন্ধেন তমসাবৃতাঃ।
তাংন্তে প্ৰেত্যাভিগচ্ছন্তি
যে কে চাত্মহনো জনাঃ॥৩
অন্বয়: অসুর্যাঃ (সূর্যহীন, অসুরোচিত); নাম (নামে পরিচিত); তে লোকাঃ (সেই সব লোক); অন্ধেন (আত্মজ্ঞানহীন বা অজ্ঞানরূপ); তমসা (অন্ধকারের দ্বারা); আবৃতাঃ (আচ্ছাদিত); যে কে চ আত্মহনঃ (আত্মঘাতী, যাঁদের আত্মজ্ঞান হয়নি); জনাঃ (মানুষেরা); তে প্ৰেত্য (দেহত্যাগের পর); তান্ (সেই সকল লোকে); অভিগচ্ছন্তি (যান বা প্রবেশ করেন)।
সরলার্থ: এমন সব জগৎ আছে যা (সূর্যহীন) দানবদের যোগ্য আবাস। এই সব জগৎ অন্ধকারে আচ্ছন্ন, যেমন কোন অন্ধ ব্যক্তি (অর্থাৎ যাঁরা আত্মজ্ঞান-রহিত) যেভাবে জগৎকে অনুভব করেন ঠিক সেই রকম। আত্মজ্ঞান অর্জনে উদাসীন হওয়া আত্মহত্যার সামিল। এই সব ব্যক্তি মৃত্যুর পর সূর্যহীন লোক অথবা অসুরলোক প্রাপ্ত হন।
ব্যাখ্যা: যাঁরা আত্মজ্ঞান লাভে সচেষ্ট নন এই শ্লোকে তাঁদের নিন্দা করা হচ্ছে। প্রকৃত অর্থে তাঁরা আত্মঘাতী। জীবনের আসল উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে ইন্দ্রিয়সুখের দাস হওয়ার চাইতে নিকৃষ্ট আর কী হতে পারে? জীবনের উদ্দেশ্য হল আত্মসংযম। এর দ্বারা ব্রহ্মের সঙ্গে একাত্মতা উপলব্ধি করতে হবে; নিশ্চিতভাবে জানতে হবে—আমিই সেই পরমাত্মা, যা শুদ্ধ চৈতন্য, নিত্যমুক্ত, নামরূপহীন এবং কোন নিয়মের অধীন নন। আত্মা অপরিবর্তনীয় এবং এই আত্মা অনাদি, অনন্ত ও বাক্যমনাতীত। আমাদের উপলব্ধি করতে হবে—আমিই সেই সচ্চিদানন্দ ব্রহ্ম। এই উপলব্ধিতেই মুক্তি। তখন আর জন্ম-মৃত্যুর দোলায় দুলতে হয় না। নিজেকে জানার চেষ্টা না করা আত্মহত্যার সমান। এর ফলে ইহলোক ও পরলোক দুই-ই নষ্ট হয়।