কুর্বন্নেবেহ কর্মাণি
জিজীবিষেচ্ছতং সমাঃ।
এবং ত্বয়ি নান্যথেতোঽস্তি
ন কর্ম লিপ্যতে নরে॥২
অন্বয়: কর্মাণি (শাস্ত্রীয় কর্মসমূহ); কুর্বন্ এব (করেই); ইহ (এখানে, এই জগতে); শতং সমাঃ (শত বৎসর); জিজীবিষেৎ (যদি বাঁচার ইচ্ছা হয়); এবম্ (এইভাবে); ত্বয়ি নরে (ওহে মানুষ তোমাতে); কর্ম ন লিপ্যতে (কর্মের ফল লিপ্ত হবে না); অন্যথা ন অস্তি (আর কোন পথ নেই)।
সরলার্থ: শাস্ত্রবিহিত কর্ম করার ফলে কোন ব্যক্তি শত বৎসর বাঁচতে ইচ্ছুক হতে পারেন। এভাবে যিনি কাজ করেন তিনি তাঁর কর্মফলে লিপ্ত হন না। এছাড়া আর অন্য কোন পথ নেই।
ব্যাখ্যা: আগের মন্ত্রটিতে ত্যাগের মহিমা কীর্তন করা হয়েছে। বলা হয়েছে জাগতিক সুখের পিছনে ছোটা অর্থহীন। কেননা এই সুখ ক্ষণস্থায়ী। তবু যদি আমরা এই সুখ লাভের জন্যই লালায়িত হই, তাহলে নিজেরাই নিজেদের দুঃখ ডেকে আনব। কেননা এই জাগতিক সুখের স্থায়িত্ব স্বল্পকাল। কিন্তু সকলের পক্ষে তো ত্যাগের পথ বেছে নেওয়াও সম্ভব নয়। অর্থাৎ অধিকাংশ মানুষই জীবনকে উপভোগ করতে চান এবং এই মন্ত্র তাঁদের উদ্দেশেই বলা হয়েছে। তাঁদের বলা হচ্ছে, যদি তাঁরা দীর্ঘ জীবন কামনা করেন তাতে কোন ক্ষতি নেই। এমনকি সেই দীর্ঘ জীবন একশ বছরও হতে পারে। তাঁরা দীর্ঘায়ু হতে পারেন কিন্তু তাঁদের জীবনের বাসনাসমূহ চরিতার্থ করার জন্য শাস্ত্রের নির্দেশ কঠোরভাবে পালন করতে হবে। এর ফলে ক্রমে তাঁদের চিত্তশুদ্ধি হবে, ইন্দ্রিয়সুখের বাসনা ধীরে ধীরে লোপ পাবে, বিবেকজ্ঞান বৃদ্ধি পাবে এবং আত্মজ্ঞানলাভের আকাঙ্ক্ষাও জাগ্রত হবে। যখন এই অবস্থায় পৌঁছনো যায় তখন সারাজীবন ধরে যে কাজ তাঁরা করেছেন সেই কর্মের ফলের দ্বারা তাঁরা আর আবদ্ধ হবেন না। তখন তাঁরা সব কিছু ত্যাগ করার জন্য প্রস্তুত।
যাঁরা মুহূর্তমধ্যে সব কিছু ত্যাগ করতে সক্ষম নন, তাঁদের জন্য এই একমাত্র পথ। তাঁরা যেন হতাশ না হন। তাঁদেরও সময় আছে। কিন্তু শীঘ্রই হোক বা বিলম্বেই হোক তাঁদেরকেও এই ত্যাগের পথই গ্রহণ করতে হবে। এখানে যে পথের কথা বলা হয়েছে সেই পথই অনুসরণ করতে হবে।